শত বছরের পুরনো আইনে চলছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ খাতের সেবা, ব্যবসায়, গ্রাহক, উৎপাদন, সরবরাহ ব্যবস্থা_ সব কিছু পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আইনের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটিশ আমলে ১৯১০ সালে বিদ্যুতের আইন করা হয়েছিল। সে আইন দিয়ে এখনও চলছে। মূল আইনের কোনো সংশোধন হয়নি। পরিবর্তন হয়নি। তবে এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের নতুন নতুন বিভাগ চালাতে সাতটি আইন করা হয়েছে। কিন্তু মূল বিদ্যুৎ আইন পরিবর্তন করা হয়নি। বিভিন্ন সময় জারি করা আলাদা আলাদা নীতিমালা বা বিধিমালা দিয়েই মূলত বিদ্যুৎ খাত চলছে। পুরো খাত নিয়ন্ত্রণে একক কোনো আইন না থাকায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্টদের।
বর্তমানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যেভাবে চলছে, তাতে আইনের কোনো মিল নেই। ১৯১০ সালের আইন অনুযায়ী সরকার ছাড়া কেউ বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও সরবরাহ করতে পারবে না। কোনো ব্যক্তি কিনতে পারবে না মিটার বা বিদ্যুৎ সরবরাহের তার। অবশ্য এগুলো এখন বাস্তবে নেই। সময়ের প্রয়োজনে পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। সরকারের সঙ্গে যোগ হয়েছে বেসরকারি খাত। এখন অনেক কিছুই ব্যক্তি খাতে হচ্ছে। বেসরকারি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। সঞ্চালন ও বিতরণ করছে সরকারি কোম্পানি। এখন উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে বিদ্যুৎ খাতে ১০টি সরকারি সংস্থা কাজ করছে।
পুরনো আইনে মোট ৫৮টি ধারা আছে। এতে লাইসেন্স দেওয়া, শাস্তি,
উৎপাদন, সঞ্চালনসহ বিভিন্ন বিষয় আছে। যার বেশিরভাগই এখন অপ্রয়োজনীয়। ১৯১০ সালের আইনের ৩৯, ৩৯(এ), ৪০, ৪০(এ), ৪১, ৪২, ৪৩ ও ৪৪ নম্বর ধারায় বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি উল্লেখ করা হয়েছে। এক বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত জেল হওয়ার নিয়ম আছে। সঙ্গে আছে এক হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করার নিয়ম। তবে বিদ্যুৎ চুরি, মিটার টেম্পারিংসহ বিভিন্ন কারণে সর্বোচ্চ শাস্তি আছে এক থেকে তিন বছরের জেল অথবা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা। অবৈধ ট্রান্সমিশনের জন্য পাঁচ থেকে ১০ বছর জেল অথবা প্রতিদিন এক হাজার টাকা জরিমানা।
এসব শাস্তি এখন আর বাস্তব উপযোগী নেই। বর্তমানে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) প্রতিনিয়ত অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে লাখ টাকার উপরে জরিমানা করছে। অথচ আইন বলছে বিদ্যুতে ২৫ হাজার টাকার বেশি জরিমানা নেই।
বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি পরিবর্তন হয়েছে। আগে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করা হতো সরকারের পক্ষ থেকে। সরকার যখন বিবেচনা করত তখনই বিদ্যুতের দাম নতুন করে নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু এখন কমিশনের মাধ্যমে শুনানি করে দাম বাড়ানো বা কমানো হয়। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব কাজের জন্য সব প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নিতে হয়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন দাম বাড়ানো এবং লাইসেন্স দেওয়ার কাজ করে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগ হচ্ছে। একক বেসরকারি বিনিয়োগ হচ্ছে। আঞ্চলিক বা বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। যোগ হয়েছে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ। এসব কিছুই আইনে নেই।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ আইনটি অনেক পুরনো। এ আইনটি যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। আগে শুধু পিডিবি বিদ্যুতের সব দেখভাল করত। এখন তার বিস্তৃতি হয়েছে। অনেক কার্যক্রম বেড়েছে। তাই সম্পূর্ণ নতুন করে বিদ্যুৎ আইন করা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে অনেক কিছুই হচ্ছে, যা প্রচলিত আইনে পরিষ্কারভাবে নেই। প্রয়োজনের তাগিদে এই খাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে এবং যেগুলো এখন চলছে সেগুলো নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নতুন আইনে বিদ্যুৎ চুরি কিংবা অবৈধ ব্যবহারকারীর জেল-জরিমানা বাড়ানো হবে। বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কোম্পানিকে এ আইনের আওতায় আনা হবে।
১৯৯৬ সালে করা একটি নীতিমালার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়। ওই নীতিমালার আওতায় ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ কেনে পিডিবি। এর বাইরে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ কেনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
Discussion about this post