চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৯ টি পদের মধ্যে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ ১০টি পদে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। বাকি পদে জয় পেয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ।
দুইদিন ধরে ভোট গণনা শেষে সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় জেলা আইনজীবী সমিতির গঠিত নির্বাচন কমিশন এই ফলাফল ঘোষণা করে।
সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, নাটকীয়তা আর চাঞ্চল্য সৃষ্টির পর মাত্র ১ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন অ্যাডভোকেট আবু হানিফ। তিনি পেয়েছেন ১৩৮৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্য পরিষদের নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
এছাড়া সিনিয়র সহ সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুন্নাহার শওকত এবং বিএনপি সমর্থিত মোহাম্মদ আলী সমান ভোট পাওয়ায় তাদের ৬ মাস করে দায়িত্ব পালনের জন্য বলেছে নির্বাচন কমিশন। উভয়ের প্রাপ্ত ভোট ১২০৪।
ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন অ্যাডভোকেট রতন রায়। পেয়েছেন ১১৬৩ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্য পরিষদের এ এস এম বদরুল আনোয়ার পেয়েছেন ১০৩৮ ভোট।
নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, রোববার ভোটগ্রহণের পর রাতে ফলাফল প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু সিনিয়র সহ সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পুন:গণনার আবেদন আসে। এজন্য আজ (সোমবার) আবারও গণনার পর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে।
চূড়ান্ত ফলাফলে সমন্বয় পরিষদ পেয়েছে সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি (প্রথম ৬ মাসের জন্য) সাধারণ সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এবং ৫টি নির্বাহী সদস্য পদ।
ঐক্য পরিষদ পেয়েছে সিনিয়র সহ সভাপতি (শেষ ৬ মাসের জন্য), সহ সভাপতি, সহ সাধারণ সম্পাদক, অর্থ সম্পাদক, লাইব্রেরি সম্পাদক ও ৫টি নির্বাহী সদস্য পদ।
তবে লটারিতে সমন্বয়ের কামরুন্নাহার শওকত জিতে যাওয়ায় তিনিই প্রথম সিনিয়র সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সমন্বয়র পরিষদকে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে সহ সভাপতি পদে জিতেছেন ঐক্য পরিষদের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ১৬২০।
সহ সাধারণ সম্পাদক পদে জিতেছেন মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৪৩৩।
অর্থ সম্পাদক পদে ঐক্য পরিষদের মহিউদ্দিন হক চৌধুরী জুয়েল ১৬১৯ ভোট পেয়ে জয় পেয়েছেন।
পাঠাগার সম্পাদক পদে জয়ী ঐক্য পরিষদের আব্দুল কাইয়ূম ভূঁইয়া পেয়েছেন ১০৪৯ ভোট।
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে সমন্বয় পরিষদের জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নীপা ১৮০০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন।
তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জয়ী মো. ফয়েজ উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ১৬৯২ ভোট।
সমন্বয় পরিষদ থেকে সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন এম সালাউদ্দিন মনসুর চৌধুরী, অভিজিৎ আচার্য, খাইরুন্নিসা আখতার নিসা, অসীম শর্মা ও মেজবাহ উদ্দিন দোয়েল।
ঐক্য পরিষদ থেকে জয়ী প্রার্থীরা হলেন- মাহমুদ-উল-আলম চৌধুরী মারুফ, ইমতিয়াজ আহম্মদ জিয়া, মোস্তফা কামাল, এরফানুর রহমান ও আলাউদ্দীন আল আজাদ।
সভাপতি পদে জয়ী রতন রায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের দু:সময়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বামপন্থী সংগঠন ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু হানিফও চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ।
গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জয় পাওয়ায় চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনতোষ বড়ুয়া বলেন, সাধারণ আইনজীবীরা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন। গতবার যারা নির্বাচিত হয়েছিলেন তাদের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি আর লুটপাটের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন আইনজীবীরা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অনেক নেতিবাচক প্রচারণা হয়েছিল। সাধারণ আইনজীবীরা সম্মিলিতভাবে এর জবাব দিয়েছেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে এবার ৩ হাজার ১০৪ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। মোট ভোটার ছিল ৩ হাজার ৮০১ জন।
বরাবরের মতো এবারের নির্বাচনেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত তিনটি প্যানেল। এর মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ, একটি বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ এবং অন্যটি আওয়ামী লীগের একাংশ ও বাম সমর্থিত সমমনা আইনজীবী সংসদ।
এছাড়া বাম সমর্থিত গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদও আলাদাভাবে দুটি পদে প্রার্থী দিয়েছিল। তবে সমমনা এবং গণতান্ত্রিক আইনজীবী পরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসতে পারেনি।
জেলা আইনজীবী সমিতির ১০ জন নির্বাহী সদস্যসহ ১৯টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
Discussion about this post