কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২৬০ টাকা দিয়ে চাপাতি কিনে বদরুল আলম। ওই চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে নার্গিসকে কুপিয়ে জখম করে।
বুধবার (০৫ অক্টোবর) বিকেলে সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানায় বদরুল। আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চাপাতি বিক্রির দায়ে জনৈক কামারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা জানতে পারে পুলিশ।
এদিন বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে জবানবন্দি শেষ হলে বদরুলকে কারাগারে প্রেরণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে তাকে আদালতে আনা হয়।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে সিলেট আদালতের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নার্গিসকে হত্যা চেষ্টায় নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছি বদরুল।
জবানবন্দি শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালতে বদরুলের জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, খাদিজা আক্তার নার্গিসের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। পুরনো সম্পর্ক জোড়া লাগাতে চেষ্টা করে বদরুল। কিন্তু নার্গিস তাকে পাত্তা দেয়নি। নার্গিস এমসি কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছে, এও জানতো সে।
জবানবন্দিতে বদরুল জানায়, তার সঙ্গে কথা বলার জন্য নার্গিসকে একটি মোবাইল ফোন কিনে দিলেও তা ফিরিয়ে দেয়। ঘটনার দিন গত সোমবার (০৩ অক্টোবর) সে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে আসে। নার্গিসকে পানির ক্যান কিনে নিলেও তা গ্রহণ করেনি। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে নগরীর আম্বরখানার একটি কামারের দোকান থেকে গরু জবাইর কথা বলে ২৬০ টাকা দিয়ে চাপাতি কিনে বদরুল।
তখন সে নার্গিসকে মেরে ফেলার জন্য মনস্থির করে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে যায়। পরীক্ষার হল থেকে বেরোনোর পর ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ে তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে বদরুল। হত্যাচেষ্টার সময় জনতা পাকড়াও করে গণপিটুনি দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে।
আদালতে জবানবন্দি গ্রহণে আনার আগে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বদরুল বলে, নার্গিস বেঁচে থাকলে যদি পরিবার তার কাছে বিয়ে দেয়, তবে তাকে গ্রহণ করবে সে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুছা সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা রয়েছেন মহানগরীর শাহপরান থানার এসআই হারুন মজুমদার। তাকে বদলি করে ওসি (তদন্ত) সুরঞ্জিত তালুকদারকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হবে।
গত সোমবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রকাশ্যে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে হত্যার চেষ্টায় কুপিয়ে জখম করে বদরুল। বর্তমানে সে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নার্গিস সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার আউশা গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী মাসুক মিয়ার মেয়ে।
হামলাকারী বদরুল আলম সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুনাইঘাতি গ্রামের সাইদুর রহমানের ছেলে ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৮-০৯ সেশনে অর্থনীতি বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
Discussion about this post