প্রার্থীদের ‘সোনার হরিণ’ ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নন-ক্যাডার পদে মনোনীত একাধিক প্রার্থী।
ক্যাডার পদে সুপারিশ না পাওয়া এসব প্রার্থীর অভিযোগ, বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদের চেয়ে কম সংখ্যক সুপারিশ এবং প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে বেশি সংখ্যক সুপারিশ করা হয়। এতে অনেকেই ক্যাডার পদ পায়নি। ফলাফল বিশ্লেষণ করেও বিজ্ঞাপনে দেওয়া পদ এবং সুপারিশ করা পদে সুপারিশ সংখ্যায় পরিবর্তন এসেছে।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, কোটা থেকে প্রার্থী না পাওয়া এবং সংশ্লিষ্ট ক্যাডার পদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রার্থী পাস না করায় কিছু পদে কম-বেশি প্রার্থী সুপারিশ পেয়েছেন।
গত ২৯ আগস্ট ৩৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে দুই হাজার ১৫৯ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি।
চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, উল্লিখিত বিজ্ঞাপনে কিছু পদে বেশি সুপারিশ এবং কিছু পদে অনেক কম সংখ্যক প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়।
বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত প্রশাসন ক্যাডারে ২০০টি পদ থাকলেও সুপারিশ পেয়েছেন ২৯৩ জন, পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার পদে ৮০টি পদের বিপরীতে সুপারিশ এসেছে ১৪৮ জনের।
প্রফেশনাল ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা পদে ৪টি পদের বিপরীতে ২৭৫ জন, স্বাস্থ্য ক্যাডারের সহকারী সার্জন পদে ২৭২টির স্থলে সুপারশি পেয়েছেন ১৯৮ জন। অন্যান্য বিষয়েও পদ সংখ্যায় পরিবর্তন হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের বাংলার প্রভাষকের ১২০টি পদের বিপরীতে ৮২ জনসহ অন্যান্য বিষয়েও সুপারশিকৃত পদের হেরফের হয়েছে।
৩৪তম বিসিএসের বিজ্ঞাপনে ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য’ অংশে নতুন পদ সৃষ্টি, পদোন্নতি, অবসরগ্রহণ ইত্যাদি কারণে ক্যাডার পদের সংখ্যা বাড়ানো এবং অলঙ্ঘনীয় প্রশাসনিক বা আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে শূন্য পদসংখ্যার পরিবর্তন হতে পারে- উল্লেখ থাকলেও এতো পরিবর্তন মানতে নারাজ নন-ক্যাডার পদে থাকা প্রার্থীরা।
একাধিক প্রার্থী বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, যেসব পদে কম সংখ্যক প্রার্থীকে সুপারশি করা হয়েছে অথচ ওই ক্যাডারের জন্য অনেক যোগ্য প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নন-ক্যাডার লিস্টে আছেন।
বৈষম্যের শিকার দাবি করে তারা বলছেন, আমরা লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় পাস করেছি এবং আমাদের জন্য উপযুক্ত পদও খালি রয়ে গেছে। অথচ আমরা নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাইনি।
তারা প্রশ্ন তোলেন, প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারে পদ বাড়ানো হলো, সেখানে অন্য ক্যাডারের পদ কমানো হল কেন? লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পর্যাপ্ত প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও কেন পদ খালি রাখা হলো?
বিষয়টি নিয়ে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) আ. ই. ম. নেছার উদ্দিন বলেন, কোটা সংক্রান্ত কারণে পদের কম-বেশি সুপারশি হয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা তো আমরা সাধারণ প্রার্থী দিয়ে পূরণ করতে পারি না। এছাড়া নির্ধারিত পদের জন্য পাস না করলে সংশ্লিষ্ট পদ পূরণ সম্ভব নয়।
তবে কোটার ক্ষেত্রে কোন ক্যাডারে কতজনকে সুপারিশ করা হয়েছে তা জানায়নি পিএসসি।
প্রিলিমিনারির ফলেও ছিল জটিলতা
আড়াই বছর আগে ২০১৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন ক্যাডারে দুই হাজার ৫২ পদে নিয়োগের জন্য ৩৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। এতে আবেদন করেন দুই লাখ ২১ হাজার ৫৭৫ জন।
ওই বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ৯৫ হাজার পরীক্ষার্থী। কোটা জটিলতায় দুই দফায় প্রকাশ করা হয় প্রিলিমিনারির ফল।
প্রথম দফায় ওই বছরের ৮ জুলাই কোটার ভিত্তিতে প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করা হয়, যাতে ১২ হাজার ৩৩ জন উত্তীর্ণ হন। তুলনামূলক বেশি নম্বর পেয়েও অনেক সাধারণ মেধাবী প্রার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠে।
৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো ‘নির্দেশনা’ দেয়া হয়নি বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হলে ১৪ জুলাই পুনর্মূল্যায়িত ফল প্রকাশ করা হয়, যাতে ৪৬ হাজার ২৫০ জন উত্তীর্ণ হন।
পুনর্মূল্যায়িত ফলে আদিবাসীরা বাদ পড়েন বলে অভিযোগ উঠে। আগের ফলে উত্তীর্ণ হলেও সংশোধিত ফলে ২৮০ জনের নাম ছিল না।
এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি ২৮০ জনকে যোগ করে প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করা হয়, যাতে মোট প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৫৩০ জন।
লিখিত পরীক্ষার ফলে দীর্ঘসূত্রতা
২০১৪ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থী ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ জন। ১৮ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, যাতে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮২২ জন।
লিখিত পরীক্ষাতে বেড়েছে প্রার্থী
ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর আরও এক হাজার ১১৬ জনকে উত্তীর্ণ করে মোট প্রার্থী দাঁড়ায় ১০ হাজার ৯৩৮ জন।
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৩৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয় ৯ হাজার ৯৬৩ জনকে।
মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৮ হাজার ৭৬৩ জনের মধ্যে ছয় হাজার ৫৮৪ জনকে সুপারিশ করতে পারেনি কমিশন।
তাদের নন-ক্যাডার পদে রাখা হয়। ‘নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০১০’ অনুযায়ী চাহিদা অনুযায়ী প্রথম/দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করার কথা বলা হলেও নিশ্চয়তা দেয়নি পিএসসি।
Discussion about this post