বিডি ল নিউজঃ
ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। তারা ইতিমধ্যে তদন্তকাজ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে এনআইএর দুই সদস্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। বাকি দুইজন রোববার রাতেই ঢাকায় পৌঁছান।বিমানবন্দরের ভারপ্রাপ্ত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা (ওসি, ইমিগ্রেশন) আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমার। সংস্থার উপ মহাপরিদর্শক সজীব ফরিদও প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থান নেয়া দুষ্কৃতকারীদের খুঁজে বের করতে একসঙ্গে কাজ করবে দু’দেশ। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভারতের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণসহ দু–একটি ঘটনায় সন্দেহভাজন ৩৪ জঙ্গির নাম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে দিয়েছে দেশটির জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)।
সোমবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এনআইএর প্রতিনিধিদল। বৈঠক চলার সময় বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের হাতে নামগুলো দেওয়া হয়।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ের ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী জড়িত কি না, তা জানতে আজ ঢাকায় এসেছেন এনআইয়ের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। তারা দুই দিনের সফরে এসেছেন।
বৈঠকে উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন,‘তারা কয়েকটি নাম দিয়েছেন। সেগুলো ভারতীয় না বাঙালি তা নিশ্চিত নয়। কারণ একেকজন জঙ্গির ১০০ নামও থাকে। তবে এগুলো এখন যাচাই করা হবে।’
মনিরুল আরো বলেন,‘জেএমবিসহ অন্য জঙ্গিরা যাতে এপাশে (বাংলাদেশ ) বা ওপাশে (ভারত) মাথাচাড়া দিতে না পারে, আশ্রয় নিতে বা ঘাঁটি গাড়তে না পারে, সেজন্যও আলোচনা হয়েছে।’
এর আগে দুপুরেও প্রতিনিধিদলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রসচিবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ওই বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভারতের এই ঘটনায় তারা (এনআইএ) মনে করেন দুষ্কৃতকারীরা ভারতের লোকও হতে পারে, বাংলাদেশেরও হতে পারে।এ বিষয়ে তারা সহযোগিতা চেয়েছেন। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি তাদের (এনআইএ) সঙ্গে তথ্য আদান–প্রদান করবে।২ অক্টোবর ওই বোমা বিস্ফোরণে শাকিল আহমেদ ও সুবহান মণ্ডল নামের দুজন নিহত এবং আবদুল হাকিম নামের একজন আহত হন। তারা জেএমবির সদস্য বলে প্রাথমিক তদন্তে এনআইএ জানিয়েছে। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাজিদ নারায়ণগঞ্জের ফরাজীকান্দা এলাকার বাসিন্দা বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করেছে।
এনআইএর প্রাথমিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়,মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও নদীয়া জেলায় ইসলামি রাষ্ট্র গড়ার ছক এঁকেছিল জেএমবি। বিস্ফোরণে জড়িত ১২ জনের চারজন বাংলাদেশের।
এদিকে দু’দেশের জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) যেসব তথ্য দিয়েছে তা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে পরিচিতিমূলক সভা শেষে এ সব কথা বলেন তিনি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারাও সংক্ষিপ্ত এ পরিচিতি সভায় অংশ নেন।
বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা জানান, এনআইএ ১০ থেকে ১৫টি মোবাইল ফোন নম্বর এবং কয়েকজনের নাম দিয়েছে। বাংলাদেশের সংস্থাগুলো তাদের চেনে কিনা, কিংবা তাদের সম্পর্কে জানে কিনা, সেটাই তারা জানতে চেয়েছেন। এনআইএর মহাপরিচালক শারদ কুমারের নেতৃত্বে চার সদস্যের এ প্রতিনিধি দল ঢাকা পৌঁছানোর পর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যান। সংস্থার উপ-মহাপরিদর্শক সজীব ফরিদও এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন।
বৈঠক শেষে বেরিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশের কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেয়া হয়নি। ভারতের সন্দেহ, ভারত ও বাংলাদেশে দু’দেশেই দুষ্কৃতকারী রয়েছে। এদের খুঁজে বের করা দরকার। তাদের এ আবেদন উড়িয়ে দেয়ার মতো নয় বলে আমরা মনে করি। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে মাত্র একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের সঙ্গে এখনও তেমন কোন তথ্য আদান-প্রদান হয়নি। তবে তারা আমাদের সমস্যা দেখবে, আমরাও তাদের সমস্যা দেখবো। আমরা একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করবো। আমরা চাই না দু’দেশে কোন দুষ্কৃতকারী থাকুক। তারা দেশ ও জনগণের শক্র।
Discussion about this post