৩৭ বছর পার করে ৩৮ এ পা দিল দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির জন্য যাত্রা পথটি মোটেও মসৃণ ছিল না। কখনো ক্ষমতার মসনদে। আবার কখনো বছরের পর বছর ক্ষমতার বাইরে। দলটির সবশেষ অবস্থান সংসদের বাইরে।তবে দীর্ঘসময়ের পথ চলায় নানা ঘাত প্রতিঘাতে তাদের সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটা নাজুক। তাই এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। যার নেতৃত্বে আছেন চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদ জিয়া।
কাল ১ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান আর পাল্টা-অভ্যুত্থানের এক পটভূমিতে ৭ নভেম্বর ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। প্রথমে তিনি ১৯ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীর একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হলে বিএনপি প্রথমবারের মতো নেতৃত্বের সংকটে পড়ে। তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার সাময়িক সময়ের জন্য সরকার ও দলের হাল ধরেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। দলের সংকটকালে ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির হাল ধরেন খালেদা জিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপির বর্তমান অবস্থাকে এক ধরণের সংকট বলতে হবে। কারণ দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বলতে গেলে সে রকম কোনো কর্মসূচি দিতে পারছে না বিএনপি। দলের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি বুঝতে হবে। তাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের সমস্যাকে দলীয় সমস্যা হিসেবে চিন্থিত করে কর্মসূচি দিতে হবে।যে সব বিষয় জনগণকে টাস করে।কারণ আপনি তো রাজনীতি করছেন জনগণের জন্য।
তিনি বলেন, দমনপীড়ন সব সরকারের সময় ছিল এটা থাকবে। এটা যেনে সবাই রাজনীতি করে। তাই পরিস্থিতিকে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, “বিএনপির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরপর দুই দফা আন্দোলন বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরী হয়েছে।
দলের মধ্যে কো-অর্ডিনেশনের অভাব।যারা মাঠে কাজ করেন তাদের নেতৃত্বে না নেয়া।অন্যদিকে যারা নেতৃত্বে আছেন তারা একদিকে মাঠে নামতে চান না, আবার পদও ছাড়তে চাইছেন না।”
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতি হবে বিএনপিও হয়তো ভাবেনি।তবে এজন্য সরকারের দমন-পীড়নকে দায়ি করে বসে থাকলে হবে না। নিজেদের সমস্যা নিয়ে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের একটা আত্মসমীক্ষা দরকার।
বিএনপি সংকটে আছে এমনটা মানতে না চাইলেও এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, “হয়তো দলে দক্ষ লোকের অভাব এবং সে কারনেই হয়তো দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।যে কারণে বিপুল জনসমর্থন থাকার পরও দলটি ঘুড়ে দাঁড়াতে পারছে না।তবে বিএনপিকেই ঘুড়ে দাঁড়াতেই হবে।”
বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তার পরামর্শ হলো- দলকে ঢেলে সাজাতে হবে, নিয়মিত কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নতুন নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে।তারা যদি অতীত থেকে শিক্ষা না নেয় তাহলে বিএনপি শুধু একটি দল হিসেবেই বেঁচে থাকবে।”
Discussion about this post