১২ জুন থেকে ২৪ জুলাই, গত ৪৩ দিনে বিশ্বের নানা প্রান্তে অন্তত ২৪টি জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা- এই চার মহাদেশে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত এক হাজার সাতজন। নিহতদের মধ্যে পশ্চিমা নাগরিক মাত্র দেড়শতাধিক। অন্যদিকে ইসলামকে সামনে রেখে কথিত ইসলামিক স্টেটের এসব হামলায় আট শতাধিকই ছিল মুসলিম।
এছাড়া ২৪টি হামলার মধ্যে ১৩টি হামলায় হামলাকারী একজন। অর্থাৎ একজনের বিনিময়ে অনেককে খতম করার ‘লোন উলফ’ লাইনেই এই হামলাগুলো হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই ১৩টি ‘লোন উলফ’ হামলার মধ্যে তিনটি বড় মাপের। আমেরিকার ফ্লোরিডা, ফ্রান্সের নিস এবং জার্মানির মিউনিখে তিন হামলাকারী নিজেরা মরলেও, তার আগে খুন করে গেছে ১৪৪ জনকে।
জঙ্গি হামলাগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো –
১২ জুন, ২০১৬, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অরল্যান্ডোর সমকামী নাইট ক্লাবে আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন এক বন্দুকধারীর হামলায় ৪৯ জন প্রাণ হারায়। পরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় হামলাকারীর। ‘লোন উলফ’ কায়দায় এ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
২০ জুন, ২০১৬, আফগানিস্তান: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে কানাডা দূতাবাসের কাছে আত্মঘাতী বোমায় কমপক্ষে ১৬ জন মারা যায়। নয়জন আহত হয়। তালিবান এই হামলার দায় স্বীকার করে।
১ জুলাই, ২০১৬, ঢাকা: ১ জুলাই রাত সাড়ে আটটা নাগাদ গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় দুষ্কুতকারীরা। জিম্মি করে রাখে কিছু বিদেশী পর্যটকদের। রাতভর চলে পুলিশি-জঙ্গি সংঘর্ষ। এই সংঘর্ষে দুই পুলিশ ও ছয় জঙ্গিসহ প্রাণ হারায় ২৯ জন। আহত হয় অর্ধশতাধিক। এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস। তবে জামায়াত-উল-মুজাহিদিনের যোগ রয়েছে বলেও জানা যায়।
১ জুলাই, ২০১৬, ঢাকা: গুলশান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার দিনেই বাংলাদেশের ঝিনাইদাহের একটি মন্দিরের হিন্দু সেবায়েত শ্যামানন্দ দাসকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। সন্দেহের তীর আইএসের দিকে।
২ জুলাই, ২০১৬, আফগানিস্তান: আফগানিস্তানের কারিজে এক বন্দুকধারীর অতর্কিত হামলায় একই পরিবারের সাতজন প্রাণ হারান। বন্দুকধারীও মারা যায়। এই ঘটনায় তালিবানের হাত রয়েছে বলে জানা যায়।
৩ জুলাই, ২০১৬, ইরাক: ৩ জুলাই জঙ্গি হামলায় মৃত্যু মিছিলে পরিণত হয় ইরাকের বাগদাদ। সেদিন সন্ধ্যায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ৩২৫ জন সাধারণ মানুষ। আহত হয় ২৪৬ জন। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
৩ জুলাই, ২০১৬, ইরাক: ইরাকের হাওইজায় ১৫ জনকে হত্যা করে আইএস।
৪ জুলাই, ২০১৬, সৌদি আরব: সৌদি আরবের জেদ্দা, কাতিফ ও মদিনায় পরপর আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় চার সাধারণ মানুষ ও চার জঙ্গি। সন্দেহের তীর আইএসের দিকে।
৫ জুলাই, ২০১৬, সিরিয়া: সিরিয়ার আল-হাসাকা শহরে আইএসের আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কমপক্ষে ২৫ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।
৫ জুলাই, ২০১৬, সিরিয়া: সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে ৪০ জনকে অপহরণ করে রাখে আইএস। তারা পালানোর চেষ্টা করলে সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করে আইএস জঙ্গি।
৬ জুলাই, ২০১৬, ইয়েমেন: ইয়েমেনের অ্যাডেন বিমানবন্দরের কাছে জঙ্গি আক্রমণে প্রাণ হারায় কমপক্ষে ২৫ জন। আল-কায়দার হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৭ জুলাই, ২০১৬, ইরাক: ইরাকের বালাদে সৈয়দ মোহাম্মদ বিন আলি আল হাদির মসজিদের সামনে আইএসের আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ৫৬ জন। এরপর কয়েকজন বন্দুকধারী অতর্কিত গুলি চালায়। সেখানে মারা যায় শতাধিক মানুষ। এই ঘটনায় তিন জঙ্গির মৃত্যু হয়।
৭ জুলাই, ২০১৬, বাংলাদেশ: ঈদ-উল-ফিতরের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের বাইরে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। পুলিশ ও জঙ্গি লড়াইয়ে মারা যায় চারজন। আহত হয় ১৩ জন।
৯ জুলাই, ২০১৬, সিরিয়া: সিরিয়ার আলেপ্পো শহরে জঙ্গি হামলায় ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় ১৪৩ জন। রেবেল মিলিট্যান্টস এর দায় স্বীকার করে।
৯ জুলাই, ২০১৬, আফগানিস্তান: আফগানিস্তানের কান্দাহার ও পাক্তিয়া জঙ্গি হামলায় শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে তালিবান।
১১ জুলাই, ২০১৬ আফ্রিকা: আফ্রিকার সোমালিয়ার মোগাদিশুতে আত্মঘাতী বোমায় ১০ জন সেনা মারা যায়। আল-শাহবাব এ হামলার দায় স্বীকার করে। তাদের দাবি, ওই হামলায় ৩০ জন সেনা হত্যা করেছে তারা।
১২ জুলাই, ২০১৬, ইরাক: বাগদাদে এক ব্যস্ত বাজারে আত্মঘাতী গাড়ি বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় ১২ জন সাধারণ মানুষ। শহরে অন্য বিস্ফোরণে আরও পাঁচ জন মারা যায়। ওই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
১৩ জুলাই, ২০১৬, আমেরিকা: উত্তর আমেরিকার পানাকায় বিস্ফোরণে আহত হয় একজন। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।
১৪ জুলাই, ২০১৬, ফ্রান্স: ফ্রান্সের নিসে একটি ট্রাক নিয়ে নৃশংস হামলা চালানো হয়। ট্রাকচাপায় ও হামলাকারীর গুলিতে প্রাণ হারায় ৮৪ জন। তিউনিশিয়ান বংশোদ্ভূত অভিযুক্ত জঙ্গি মোহাম্মদ লাহুয়ায়েজ বুহলেল মারা যায় পুলিশের গুলিতে। বুহলেল তাদের সৈন্য বলে দাবি করে আইএস।
১৮ জুলাই, ২০১৬ কাজাখস্তান: কাজাখস্তানের সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে পুলিশ স্টেশনে জঙ্গি হামলায় ছয়জন মারা যায়। আটজন আহত হয়। এক জঙ্গিও মারা যায় ওই হামলায়।
১৮ জুলাই, ২০১৬ আফ্রিকা: আফ্রিকার মালির নামপালাতে মিলিটারি ক্যাম্পে হামলা চালায় এক বন্দুকধারী। ওই হামলায় ১৭ জন সেনা মারা যায়। ৩৫ জন আহত হন। ওই হামলার দায় স্বীকার করে ম্যাসিনা লিবারেশন ফ্রন্ট একিউআইএম।
২০ জুলাই, ২০১৬, ইরাক: ইরাকের কোয়ারাহতে ৩৩ জনকে হত্যা করে আইএস।
২২ জুলাই, ২০১৬, জার্মানি: জার্মানির মিউনিখে অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে হামলায় জঙ্গিসহ নয়জন মারা যায়। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো জঙ্গি সংগঠন এর দায় স্বীকার করেনি।
২৪ জুলাই, ২০১৬, কাবুল: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এক বিক্ষোভ সমাবেশে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২৩১ জন। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
Discussion about this post