নিজস্ব প্রতিবেদক: সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটেই অনেকে গন্তব্যস্থলে রওনা হয়েছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাওয়া গেলেও চালকরা কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। রিকশাচালকরাও দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন।
আজ রবিবার ধর্মঘটের প্রথম দিন সকাল থেকেই রাজধানীতে কোনো ধরনের গণপরিবহন না চলায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
এদিকে এই কর্মবিরতির কারণে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি ছেড়ে যেতে পারছে না। তেমনি ঢুকতেও পারছে না ঢাকায়।
রাজধানীর খিলক্ষেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন এক নারী ও তার বৃদ্ধ মা। তারা যাবেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে বাস না পেয়ে সড়কের পাশেই বসে কান্না করতে দেখা গেল ওই নারীকে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই ওই নারীর মা এ প্রতিবেদককে জানান, মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে যাবেন। কিন্তু কোনো বাস পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, আজ ধর্মঘটের কথা জানতাম না। দুই ঘণ্টা হল বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। অটোরিকশাচালকরাও অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছেন। এত টাকাও নেই। কীভাবে হাসপাতালে যাব?
কুড়িল বিশ্ব রোড এলাকায় দেখা যায়, শত শত মানুষ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কোনো বাসের দেখা মিলছে না। তবে বাস না পাওয়ায় নারী ও বয়স্কদের পড়তে হয়েছে বেশি ভোগান্তিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, সাতরাস্তা, মহাখালী, মিরপুর, গাবতলী, ধানমণ্ডি, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া রাস্তায় কোনো গণপরিবহন নেই।
এর আগে শনিবার শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক উছমান আলী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন যুগোপযোগী আধুনিক ও উন্নত সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে।
সেই দাবিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার আইন পাস করলেও বেশ কিছু ধারা শ্রমিক স্বার্থের বিরুদ্ধে করা হয়েছে। যে কারণে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আমরা জানি, দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না; কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবেই ঘটে।
পরিবহন শ্রমিকদের ঘোষিত আট দফ দাবি হল- সড়ক দুর্ঘটনায় মামলা জামিনযোগ্য করতে হবে, শ্রমিকদের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকা করা যাবে না, সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখতে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্সে শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি করতে হবে, ওয়েস্কেলে (ট্রাক ওজন স্কেল) জরিমানা কমানোসহ শাস্তি বাতিল করতে হবে, সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় শ্রমিকদের নিয়োগপত্র সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত স্বাক্ষর থাকার ব্যবস্থা করতে হবে, সব জেলায় শ্রমিকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে এবং লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।
এর আগে শনিবার শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সংসদ সদস্য ওয়াজিউদ্দিন খান ও সাধারণ সম্পাদক উছমান আলী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন -২০১৮’ পাস হয়েছে। এ আইনে শ্রমিক স্বার্থ রক্ষা ও পরিপন্থী উভয় ধারা রয়েছে। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইন পাস করা হয়েছে। আইনে সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় অপরাধী হয়ে ফাঁসির ঝুঁকি রয়েছে। এমনই অনিশ্চিত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পেশায় দায়িত্ব পালন করা শ্রমিকদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো আমাদের সামনে খোলা নেই।
Discussion about this post