এস এইচ সৈকত, বালাগঞ্জ থেকে
বিডি ল নিউজঃ বালাগঞ্জে ইমাম ও চালক নিখোজ হওয়ার পাঁচ দিন
পর নিখোজ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বিকাল সন্ধা ৬টায় নিখোঁজ
ইমামের নিজ শালীর বসত ঘরের অবহৃত
একটি বাথরুমের
ভিতরে কবর দেয়া অবস্থায় ইটের ঢালাই ভেঙ্গে ইমাম ও চালকের লাশ উদ্ধার
করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ইমামের শালী আফিয়া বেগম (৪২), তার ছেলে মারজানুল
আলম
শিমুল (২২), শাকিল
(১৭) এবং মেয়ে শারমিন
(১৫) কে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে খুনিরা অকপটে
হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। তবে অনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারনে খুনিরা
এক সাথে দুটি হত্যা কান্ড
ঘটাতে পারে বলে
প্রাথমিক ভাবে ধারনা করছে পুলিশ। নিহত ইমামের ছোট ভাই আব্দুল খালিক
কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ভাইয়ের মোটা অংকের টাকার আত্মসাত করার জন্য
তাকে খুন করা হয়েছে। আমি খুনদের
ফাসি চাই। ইমাম ও
চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় উভয় পরিবারে চলছে শোকের মাতম বালাগঞ্জ পুর্ব বাজার
জামে মসজিদের ইমাম
ও খতিব হাফেজ আব্দুল হামিদ ওরফে আব্দুস শুকুর কালা হুজুর (৫৫) ও
অটোরিক্সা চালক
আরশ আলী (২৫) গত
১৮ অক্টোবর রাতে নিখোজ হন। এর পর থেকে নিখোজদের
আত্মীয় স্বজনদের
দফায়-দফায় জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের বাড়ীতে পুলিশের পক্ষ থেকে গোপন তল্লাশী
করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সিএনজি অটোরিক্সা
শ্রমিকরা পুলিশকে
তথ্য দেয় যে, হুজুর
প্রায়ই রাতের বেলা তিনির শালীর বাড়ীতে যেতেন এবং শালীর বড় ছেলে মারজানুল আলম
শিমুল (২২)
সার্বক্ষনিক হুজুরের
সাথে থাকত। সে হুজুরের আশয়-
বিষয়সহ অর্থনৈতিক
বিষয়াদি দেখাশুনা
করত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল
১০টার দিকে নিখোঁজ ইমামের
শালী আফিয়া বেগমের
সামী ফিরোজ মিয়ার
বাড়ী উপজেলার সদর
ইউনিয়নের ইলাশপুর
বাজার সংলগ্ন বড়চর
গ্রামে গিয়ে সন্দেহজনক ভাবে তল্লাশী করেন বালাগঞ্জ থানার এস আই অরুপ কুমার চৌধুরী।
তল্লাশীকালে ইমামের
শালী ও শালীর ছেলে-
মেয়ের সাথে কথা বলেন। এ সময় তারা অসলগ্ন কথা বার্তা বলেন। তাদের এক জনের
কথার সাথে অন্যজনের কথার কোন মিল পাওয়া যায়নী।
এতে তাদের প্রতি সন্ধেহ আরও ঘনিভুত হয়। তাদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে
এস আই অরুপ কুমার চৌধুরী ঘরের অবহৃত বাথরুমের
মধ্যে সদ্য নির্মিত
একটি স্থাপনা দেখতে
পান। দারোগা অরুপ
বালাগঞ্জ থানার ওসি অকিল উদ্দিন আহমদকে বিষয়টি
অবগত করার ওসি একদল পুলিশ সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। লাশের সন্ধান পাওয়ার
হাজার হাজার উতসুক জনতা বড়চর
গ্রামের ঐ বাড়ীতে ছুটে যান। এসময় স্থানীয় উত্তেজিত
জনতা বাড়ীতে ব্যাপক
ভাংচুর করতে থাকে।
তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ। উত্তেজিত
জনতাকে বার বার
নিভৃত করার করার
চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নী। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কয়েক দফায় সিলেট
থেকে কয়েক প্লাটুন
ফোর্স অনা হয়। লাশের
সন্ধানের খবর জানতে জানার পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেটর পুলিশ সুপার (ডিবি)
রওশনুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার দক্ষিন সার্কেল
গোপাল চক্রবর্তী,
বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদাল মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান
সৈয়দ আলী আছগর, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের
দায়িত্ব পালনকারী ইউএনও আশরাফুর রহমান, উপজেলা
আওয়ামীলীগের
সেক্রেটারী আনহার
মিয়া, ওসমানীনগর
থানা আওয়ালীগের
সেক্রেটারী আবদাল
মিয়া, ওসমানীনগর
থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, ফেঞ্চুগঞ্জ
থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর, সমাজ
সেবক সাইয়িদ আহমদ
বহলুল, সদর ইউপি‘র
চেয়ারম্যান এম এ মতিন, হাজী আব্দুল
নুর, লুতফুর রহমান,
জুনেদ মিয়া সহ
এলাকার সর্বস্তরের
জনসাধারন এবং বিভিন্ন গনমাধ্যমের কর্মীরা। সন্ধা ৬টার দিকে লাশ দুটি
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার
করে কড়া পুলিশ
প্রহরায় ময়না তদন্তের জন্য সিলেট
ওসমানী মেডিকেল
কলেজ হাসপাতাল
পাটানো হয়। শেষ খবর
পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং পুলিশ মওতায়েন
রয়েছে। বালাগঞ্জে এই
চাঞ্চল্যকর ডাবল
মার্ডারের ঘটনায় জনমনে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বালাগঞ্জের
ইতিহাসে সর্বকালের
শ্রেষ্ট ঘটনা হিসেবে
আখ্যায়িত করেছেন
অনেকেই। এদিকে নিখোজদের সন্ধান
দাবীতে গতকাল
মঙ্গলবার বালাগঞ্জে দিন ব্যাপি বিভিন্ন
আন্দোলন কর্মসুচী পালন করা হয়। এসব
কর্মসুচীতে উত্তাল
হয়ে উঠে পুরো
বালাগঞ্জ। কর্মসুচীর
মধ্যে দোকান-পাঠ বন্ধ
রেখে ব্যবসা বিরতি
পালন, মানববন্ধন,
বিক্ষোভ মিছিল,
সকাল সন্ধা পরিবহন
ধর্মঘট ও প্রশাসনের
বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
Discussion about this post