দরজায় ঈদ। সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। অথচ এসবের কিছুতে নেই শিল্পনগরী খুলনার বিভিন্ন শিল্প কারখানার ৫৭ হাজার শ্রমিক। কেনাকাটার আনন্দের পরিবর্তে তাদের পরিবারে এখন শুধুই হাহাকার।
বেতন-বোনাসের দাবিতে এসব শ্রমিকদের এখন মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন করতে হচ্ছে। ফলে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা শিল্পাঞ্চল।
হতাশ শ্রমিকরা বলেন, ঈদের আগে সরকারি কল-কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-মজুরি ও বোনাস দেওয়ার কথা থাকলেও খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব ৯টি পাটকলের শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঈদের মাত্র ৪/৫ দিন বাকি থাকলেও এখনও পর্যন্ত বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, মজুরি ও বোনাস দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসেনি। এমনকি ঈদের আগে ওই অর্থ পাওয়া যাবে কিনা তাও কেউ জানেন না।
মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ব জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এস এম জাকির হোসেন বলেন, বেতন বোনাস না পেয়ে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ব ৯ পাটকলে (খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর, আলীম, ইস্টার্ন জুটমিল এবং যশোরের জেআই ও কার্পেটিং জুটমিল) ৫৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে পাওনা আদায়ে ফুঁসে উঠেছেন তারা। মঙ্গলবার প্লটিনাম জুবিলী জুট মিলের শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে মিল বন্ধ করে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক সঙ্গে ঐক্য পরিষদের বৈঠক হয়। বৈঠকে মন্ত্রী ঈদের আগে সব বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু মন্ত্রীর সে আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা চরম হতাশ।
আলীম জুট মিল সিবিএ সভাপতি আব্দুস সালাম জমাদ্দার বলেন, ঈদের আগে পাওনা পরিশোধ না হলে ঈদের জামাত রাজপথে। আর ঈদের পর লাগাতার রাজপথ-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিজেএমসির উপ মহা-ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি ও বোনাস দেওয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
এদিকে বেতন-বোনাস না পেয়ে খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া দাদা ম্যাচ, মহসেন জুটমিল ও হার্ডবোর্ড মিলের দুই হাজার শ্রমিক পরিবার চলছে অভাব-অনটনে। ঈদ, পূজা এসব তাদের কাছে অর্থহীন শব্দ। খেটে খাওয়া এসব মানুষগুলো বর্তমানে বেকার দিন কাটাচ্ছেন।
দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম শাহাদাৎ বলেন, ভাই, আমাদের কোনো ঈদ নেই। কেবল আছে কষ্ট। আপনারা খোঁজখবর নিলে একটু ভালো লাগে। দেখেন, আমাদের জন্য লিখে কিছু করা যায় কিনা।
তিনি জানান, ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ ঘোষণা করা হয় দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি। হঠাৎ মিল বন্ধের ঘোষণায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে মিলের ৭৫০ শ্রমিক-কর্মচারীর মাথায়। মিলটি চালুর জন্য তারা অনেক আন্দোলন করেছেন। ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনার এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্যাক্টরিটি চালুর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু মিলটি আজও চালু হয়নি।
খুলনার হার্ডবোর্ড মিলের শ্রমিক আব্দুস সালাম জানান, ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ মিলের ৩০০ শ্রমিকের মুখে হাসি নেই। মিল বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছে ঈদ আনন্দ বলে কিছু নেই।
ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার খরচ জোগাতে পারছি না। দিতে পারছি না ঈদের জামা, বলতে বলতে কেঁদেই ফেললেন তিনি।
Discussion about this post