নিজস্ব প্রতিবেদক: পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর মধুর ক্যান্টিনে মারামারির ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাঁচজনকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। এদের একজনকে স্থায়ীভাবে এবং চারজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো হয় সোমবার ছাত্রলীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের কর্মী সালমান সাদিককে। আর সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মুরসালিন অনু, জিয়া হল ছাত্রলীগের সদস্য কাজী সিয়াম, জিয়া হল ছাত্রলীগের কর্মী সাজ্জাদুল কবীর এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া।
এছাড়া কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে দুজনকে; শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তিন দিনের মধ্যে তাদের তা জানাতে বলা হয়েছে।
এরা হলেন রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার, জিয়া হল ছাত্রলীগের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান শান্ত।
গত ১৩ মে মধুর ক্যান্টিনে সংঘটিত ঘটনার তদন্তের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “মধুর ক্যান্টিনে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা তদন্তের নিমিত্তে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।”
গত ১৩ মে ঘোষিত ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থেকে সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা অর্ধশত নেতা বাদ পড়েন। কমিটি প্রত্যাখ্যান করে ক্যাম্পাসে দফায় দফায় বিক্ষোভ হয়।
এর আগে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয়। রোববার রাতে আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে দেখা করতে যায় পদবঞ্চিতদের ১১ জনের একটি প্রতিনিধি দল। আওয়ামী লীগ নেতারা হলেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও বিএম মোজাম্মেল হক।
তারাই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সার্বিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও পদবঞ্চিতদের প্রতিনিধিরা রাত পৌনে ১টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছুটে যান এবং কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে মারামারির ঘটনায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার হওয়ায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য জারিন দিয়া আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতারা জানিয়েছেন, সোমবার দিনগত রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন জারিন দিয়া। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। তবে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ছাত্রলীগের গত কমিটির সমাজসেবা সম্পাদক রানা হামিদ বলেন, ‘বহিষ্কারের ক্ষোভ থেকে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে দিয়া। তাকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। ওয়াশ করা হয়েছে। এখন তার শারীরিক অবস্থা ভালো।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকায় স্থান না পেয়ে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্রলীগ নেত্রী জারিন দিয়া। কমিটিতে পদ না পেয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে উদ্দেশ্য করে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় সোমবার ছাত্রলীগ থেকে জারিন দিয়াসহ পাঁচজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
Discussion about this post