৮৫ ব্যক্তি তাদের পকেটে নিয়ে বসে আছেন দুনিয়ার অর্ধেক মানুষের সম্পদের সমান অর্থবিত্ত। এদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ২৫–৩০ বছরে ঘুরেফিরে এরাই ভোগ করছেন এ সম্পদ। দেখা গেছে ১০ জন ধনীর মধ্যে ৭ জনই প্রতিমুহূর্তে আরও ধনী হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ধনী–গরিব বৈষম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে ধনীদের ৯৫ শতাংশ প্রতিনিয়ত ফুলেফেঁপে ঢোল হচ্ছে। আর গরিবদের ৯০ শতাংশের ভাগ্য ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের চ্যারিটি সংস্থা অক্সফামের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। অক্সফামের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী,গরিব ও মধ্যম আয়ের মানুষের বার্ষিক ব্যয়, তাদের দেওয়া আয়কর ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গবেষণাটি করা হয়েছে। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অক্সফামের গবেষণা দলের প্রধান রিকার্ডো ফুয়েনতাস সবকিছু খোলাসা করেন। বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রিকার্ডোর বরাত দিয়ে বলা হয়, বিশ্বের অর্ধেকের মতো মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে। এদের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। অক্সফাম ফোর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ধনীদের তালিকা থেকে মাত্র ৮৫ জনের সম্পদের পরিমাণ যোগ করে দেখেন যে তাদের মোট সম্পদ আর দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা মানুষের মোট সম্পদের পরিমাণ সমান। এ কাজে অক্সফাম ক্রেডিট সুইস নামের একটি অর্থনীতি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিবেচনায় নিয়েছিল। অক্সফামের এই গবেষণা নিয়ে খানিক উল্টো মন্তব্য করেন ক্রেডিট সুইসের অন্যতম একজন অর্থনীতিবিদ ড. অ্যান্থনি শরোকস। তার মতে, সাদা চোখে আমরা যাদের গরিব বলছি তারা আক্ষরিক অর্থেই গরিব। পশ্চিমা বিশ্বে এমন অনেকেই আছেন যারা অঙ্কের হিসেবে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করাদের কাতারে পড়ে যায়। এদের বেশিরভাগই আসলে গরিব না। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে বেকার আছেন। অনেকে আবার তাদের আয়ের পুরোটাই খরচ করে ফেলেন।
আরও চমকপ্রদ অঙ্ক কষেছেন সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিয়েদ্রি ম্যাকক্লোস্কি। অক্সফামের গবেষণার ফলাফলে তিনি কোনও দ্বিমত না করলেও এই অর্থনীতিবিদের মতে, অতিমাত্রায় এসব ধনীরা বিশ্বের অর্ধেক মানুষের গরিব হওয়ার মূল কারণ! কিন্তু এই ৮৫ জনের সম্পত্তিকে দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করাদের মধ্যে ভাগ করে দিলে প্রত্যেকে মাত্র ৫শ ডলার করে পাবেন। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এই ৫শ ডলারে তাদের ভাগ্যের কতটুকুইবা পরিবর্তন হবে? অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে অক্সফাম ব্রাজিল,স্পেন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে জরিপ চালায়। জরিপে দেখা গেছে বেশিরভাগ লোকই বিশ্বাস করেন আইন সবসময় ধনীদের পক্ষেই থাকে। অর্থনৈতিক বৈষম্য, আয়কর আইন ও এর বিভিন্ন ফাঁক ফোকর, অর্থনীতির নির্মমতা,নীতিমালার অসামঞ্জস্যতার ফলে নারীদের ওপর বিরূপ প্রভাব এবং তেল খনিজ সম্পদ থেকে আয় এসব বিষয়কে মূল উপজীব্য রেখেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের জরিপের কাজ শেষ করে। অক্সফামের গবেষণার ফলাফলে মন্তব্য করা হয়েছে চলমান এই পরিস্থিতি থেকে চাইলেই বের হওয়া সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এবং গত দশকে ল্যাটিন আমেরিকার অর্থনৈতিক ইতিহাসের কথা উল্লেখ করেন। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লুইস ব্রান্ডিস বলেন, ‘হয় আমাদের হাতে গণতন্ত্র আছে অথবা কিছু সংখ্যক লোকের হাতে প্রচুর সম্পদ আছে। কিন্তু দুটো একসঙ্গে কোথাও নেই।’ মানে যেখানে অল্প কিছু মানুষের হাতেই সব সম্পদ আটকে আছে সেখানে গণতন্ত্রের টিকে থাকা কঠিন। ইকনোমিস্ট অবলম্বনে /এফএ/
Discussion about this post