অ্যাডভোকেট ফয়সাল সিদ্দিকী: দুর্নীতির অভিযোগে যখন উচ্চ আদালতের তিনজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হয়েছে তখন এই লেখাটা জরুরী বলে মনে করি। উচ্চ আদালতের বিচারকাজে জড়িত সর্বোচ্চ ব্যাক্তি থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত কে কে দুর্নীতি ও ঘুষের সাথে জড়িত সেই বিষয়টি তদন্তাধীন থাকায় ও এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে লেখালেখির মাধ্যমে বিচার বিভাগের সার্বিক মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরী হওয়ায় এই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বরং আমার মতো সাধারণ ও জুনিয়র আইনজীবীরা কিভাবে এই প্রতিষ্ঠানটিকে দীর্ঘমেয়াদে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভুমিকা রাখতে পারি তা নিয়ে মতামত শেয়ার করা অতীব প্রয়োজন। আমার মতামত নিম্নে তুলে ধরছি-
১) আপনি বা আমি কোনো দালাল, মুহুরি বা আইনজীবীর ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হবো না। এরা আপনাকে মামলা না পাঠানোর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইঙ্গিত দিলেও আপনি বা আমি মনে রাখবো আমার রিজিক সৃষ্টিকর্তা নির্ধারিত তাই ওই সব দালাল আমার কিছু করতে পারবে না।
২) আপনি বা আমি মনে রাখবো বা তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করবো যেসব ডাকসাইটে আইনজীবী উচ্চ আদালতে স্ব মহিমায় বিরাজ করছেন তারা কেউ আপনার বা আমার মতো দালাল তোষণ করে বড় আইনজীবী হন নি বরং লেখাপড়া করে ও কষ্ট করে দিনের পর দিন কাজ শিখে এই পর্যায়ে আসছেন। উল্লেখ্য যে এসব বড় আইনজীবীরা সমাজের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন মক্কেলদেরও গালি দিয়ে থাকেন। তাই আপনার বা আমার চিন্তা-চেতনা ভুল।
৩) আপনি বা আমি প্রতিযোগিতার বাজার মনে করে একেবারে কম ফি নিয়ে মামলা করার হীন মানসিকতা বাদ দিবো (চাইলে ফ্রী লিগ্যাল সার্ভিস দিতে পারবেন)। আজ যদি আপনি আপনার ইমিডিয়েট সিনিয়রকে টপকানোর জন্য কম ফি নিয়ে মোশন করা শুরু করেন তাহলে মনে রাখবেন তার পরের বছরই আপনার কোনো ছোট ভাই আইনজীবী হিসেবে চলে আসছে এবং সে আপনার থেকেও কম ফি নিয়ে আপনার সাথে নোংরামি করা শুরু করবে কারণ আপনি ছোট বাসায় বউ নিয়ে থেকে ওকালতি শুরু করেছিলেন কিন্তু ওই ছোট ভাই মেসে থেকেই ওকালতি করে!
৪) আমরা কখনো লোভে পড়ে কোনো দালালের (সবাই অন্তর্ভুক্ত) কথায় আমার কোনো সহকর্মীর রিসিভ করা ব্রীফের বিষয়ে তথ্য প্রদান বা কথা বলা থেকে বিরত থাকবো। কারণ আপনি বেচেঁ থাকলে প্রায় ৪০/৫০ বছর যাবৎ এই অঙ্গনে থাকবেন বা মারা গেলে আপনার জানাজা পড়বে আপনার সহকর্মী সো কোনো লোভে পড়ে আমার সহকর্মীর প্রাকটিস এর ক্ষতি হয় এমনটা করবো না।
৫) ইদানিং উচ্চ আদালত জাল সার্টিফায়েড কাগজ এর ভয়াবহতা রোধকল্পে হাইকোর্ট রুলস অনুযায়ী ডিপোনেন্ট এর শারিরীক উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেক্ষেত্রে আমরা এভিডেভিট কমিশনারকে ঘুষ দিয়ে মামলা এফিডেভিট না করিয়ে বরং ডিপোনেন্ট এর উপস্থিতি নিশ্চিত করবো। এতে আপনার দুই ধরণের উপকার হবে। এক, আপনার সাথে ওই মক্কেলের সাথে সরাসরি পরিচয় হবে যা যুগযুগ ধরে চলবে এবং দুই, আপনি সহজেই এই মামলায় দালাল কতৃক নেয়া বিশাল ফি এর অংকটা জানতে পারবেন। ছোট মানুষ হিসেবে আপনার প্রতি অনুরোধ সবাই শুধু ১ টি বছর সব মামলার ডিপোনেন্টকে এফিডেভিট করার জন্য ঢাকায় আসতে বলুন, দেখবেন পুরো এই অঙ্গনের চেহারাই বদলে যাবে।
আপনার মতও শেয়ার করুন।
Discussion about this post