ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়া কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বিষয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গতকাল শনিবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন উজ জামান চৌধুরীর সঙ্গে বোর্ডের সদস্যদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
আর এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন চিকিত্সকেরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কুমিল্লা শাখার কার্যকরী পরিষদের সভায় ওই অভিযোগ তোলেন চিকিত্সকেরা। এ নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে তনুর লাশের ময়নাতদন্তের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
গতকাল দুপুরে অনুষ্ঠিত সভায় অধ্যক্ষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্য কামদা প্রসাদ সাহা, করুণা রানী কর্মকার, মো. ওমর ফারুক। এ ছাড়া তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক শারমিন সুলতানাও উপস্থিত ছিলেন। পরে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের দপ্তরে পুনরায় তাঁরা বৈঠকে বসেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ মহসিন উজ জামান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উকিল নোটিশের জবাব আমরা সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) মাধ্যমে দেব। প্রথম ময়নাতদন্তের সঙ্গে আমি জড়িত নই। কামদা প্রসাদ সাহাও জড়িত নন। চিকিত্সক শারমিন সুলতানা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁর জবাব দেবেন।’
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টানা আড়াই ঘণ্টা বিএমএ কুমিল্লা জেলার বৈঠক হয়। নগরের রামঘাট বিএমএর কার্যালয়ে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএমএর সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিন। ওই সভায় চিকিত্সক শারমিন সুলতানাকে হয়রানি এবং কামদা প্রসাদ সাহাকে হুমকির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বিএমএ এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে চিকিত্সকদের হয়রানি না করার জন্য সব মহলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ বিষয়ে গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে চিকিত্সকদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেব।’
জানতে চাইলে চিকিত্সক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ‘ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়া দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেব না। তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে চিকিত্সক শারমিন সুলতানা এবং দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে আমরা হয়রানির মধ্যে রয়েছি। বিষয়টি বিএমএ ও কলেজের অধ্যক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এ সম্পর্কে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিএনএ প্রতিবেদন ছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে না, এমন ঘটনা অতীতে ঘটেনি। হঠাৎ কেন এমন আচরণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনাস্থা তৈরি হয়।’
আদালত, সিআইডি, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ও তনুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মার্চ তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। ২১ মার্চ তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ২৮ মার্চ আদালত নির্দেশ দেন তনুর লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ তনুর লাশ মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের বাড়ির কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। এরপর গত ৫৯ দিনেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।
১৯ মে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিত্সক শারমিন সুলতানা, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষকে উকিল নোটিশ দেয়।
Discussion about this post