জমীর উদ্দীন: শিশু হচ্ছে সবচেয়ে অসহায়। সে যখন কথা বলতে পারে না, কিছু চাইতেও জানে না, এমনকি নিজের কষ্ট ও বেদনার কথাও প্রকাশ করতে পারে না, তখন তার প্রতি সহানুভূতি দেখানো পরিবারের বড়দের দায়িত্ব। শিশুর প্রথম শিক্ষা হয় মায়ের কাছে. তারপর পরিবারের কাছে। একজন সুমাতা পারেন সুসন্তান গড়ে তুলতে, একটি আদর্শ পরিবার পারে একটি মূল্যবোধসম্পন্ন শুদ্ধতম মানুষ তৈরি করতে। একটি সংস্কৃতিবান সমাজ এবং সুশাসনমন্ডিত রাষ্ট্র পারে একজন সুনাগরিক সৃষ্টি করতে। যে সমাজ ও রাষ্ট্র উন্নত এবং কল্যাণকামী সেই সমাজের শিশুরা যথেষ্ট দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক হিসেবে কৈশোর থেকে গড়ে ওঠে। তারুণ্যের শক্তি-মেধা-বুদ্ধিমত্তা-শ্রম দ্বারা দেশের উন্নয়নের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠা বোধ করে না। কিন্তু মানুষ যদি নিষ্ঠুর হয় তখন শিশুর ভাল ভবিষ্যৎ নিয়ে কি আশা করা যায়।আর মানুষ কখন নিষ্ঠুর হয় যখন মানুষের কিছুই করার থাকেনা। তখনই মানুষের মন হয় পশুর মতনন। পশু যেমন ক্ষুধার্ত হলে স্বজাতীয়
পশুকে হত্যা করে মাংস ভক্ষন করে খেয়ে ফেলে তেমনি মানুষও ক্ষুধার্ত হতে হতে এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয় তখন আর কিছুই করার
থাকেনা। তারপরও মানুষের মধ্যেও হরেক পর্যায়ের মানুষ আছে।কিন্ত নিষ্ঠুরর মানুষটি যদি হয় মা।হ্যা আমি এইরকম মারই কথা বলছি।যে মারর শিশু সন্তানকে কোলে রাখার কথা সেই মা কেনো তার সন্তাটিকে ডাস্টবিনের নোংরা ও বর্ণনাহীন ময়লার উপর।হেটে যাওয়ার সময় হঠাৎ চোখ পড়ল কিরে,এইরকম নোংরা,গন্ধ,ডাস্টবিনের পাশে হাউমাউ করে কাঁদছে কে? পাশে গিয়ে দেখলাম একটি ৪-৫ বৎসরের শিশু,মশার অসংখ্য কামড় সহয্য করেহাতটাউপরেতোলেভিক্ষাচাইতে। ভিক্ষা চাওয়ার যেনো শক্তি নেই, ভিক্ষা করতেও জানেনা,শুধু মুখ থেকে বাহির হচছে,মা,মাগো খামু। মোর বদধ খিদা পাইছে। কিন্তু তারপরও নিষ্ঠুর মা টির মনে একটু দয়া হয়না। মনে হয় শিশু সন্তানটি ঐ মার কিনা তা ও ভুলে গেছে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম,অনেক লোকের সমাগম হলো,সবার একটাই প্রশ্ন মেয়েটিকে? তার আত্বীয় স্বজন বলতে কেউউ নাই।শেষ- মেশ একপর্যায়ে এক মহিলা সামনে আসল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ঐ মহিলাটি মূলত মা। কিন্তু ঐ মহিলাটি পরিচয় না দিয়ে বলতে লাগল,’ ওমা তোমাগোর এখানে কাজ কি? কিছু টাকা ভিক্ষা করছে,ভিক্ষা করে খায়।’ ঐ মহিলাটি আর ও বলল,” ওরা রাত অবধি ভিক্ষা করতে”। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিশু হচ্ছে মানবসভ্যতার প্রথম অবদান। এই শিশুই একদিন বড় হয়ে তার শ্রমশক্তি ও প্রতিভার অবদানেসভ্যতাকেএগিয়েনিয়েযেতেপারে, শ্রেষ্টত্বের স্বাক্ষর রাখতে পারে। সুতরাং এই শিশুকে উপযুক্ত ভাবে লালন-পালন করা সকলের দায়িত্ব, তার জীবনকে আনন্দময় – মঙ্গলময় – শান্তিময় রাখা সকলের দায়িত্ব। তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় করে তুলতে হবে যেন সে স্বাধীনভাবে চিন্তা- ভাবনা করতে পারে, নিজের উৎকর্ষ সাধন করতে পারে। শিশু হচ্ছে নতুনের জয়গান, শিশু হচ্ছে ফুলের মত পবিত্র শুদ্ধময়। তার আনন্দ – খুশি – শান্তি নিশ্চিত রাখতে হবে। তার শিশুকালকে রঙিন স্বপ্নময় করে দিতে হবে। সকল মলিনতা, জীর্ণতা, প্রতিহিংসা – পঙ্কিলতা থেকে তাকে মুক্ত করে অবশ্যই তার জন্মকে সার্থক করে তুলতে হবে। তার জীবনকে আলোয় আলোয় উজ্জল করে তুলতে হবে। কবি বলেছেন, ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি।’ এটা তো চিরন্তন সত্য। মধ্যযুগের আরও এক কবি বলেছেন, ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে- ভাতে।’ কবির এই স্বপ্ন, এই আকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের বড়দের, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের।
Discussion about this post