একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে চূড়ান্ত রায়ে ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখার পর এই রায় লেখার প্রত্রিয়া শুরু হয়। সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক ড্রাফট সম্পন্ন হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি পুরো রায়টি লিখেছেন। এখন সেটি পর্যায়ক্রমে যাবে অন্য বিচারপতিদের কাছে। তারা এতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন পরিবর্ধন আনবেন। পরে সেই মতামত যুক্ত হয়ে আরেকদফা ঘুরে আসবে বিচারপতিদের দফতরে দফতরে। আর তার পরেই নীল কাগজে প্রিন্ট করা হবে রায়। সেই রায়ে স্বাক্ষর করবেন প্রধানবিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব ক’জন বিচারপতি। তার পরেই সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা রায়টি প্রকাশ করবে।
গত ১৬ জুন মুজাহিদকে সর্বোচ্চ দণ্ড দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ।বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
বিধি মোতাবেক রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) করতে পারবে আসামি ও সরকার উভয় পক্ষই। এরপর রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তির পর সর্বোচ্চ দণ্ড বহাল থাকলে আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবে।প্রাণভিক্ষা না চাইলে রাষ্ট্র যে কোনো সময় দণ্ড কার্যকর করবে।
পূর্ণাঙ্গ রায়টি শিগগিরই প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছে সরকার পক্ষও। কবে নাগাদ মুজাহিদের রায় প্রকাশ হতে পারে? বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আশা করি শিগগিরই রায়টি প্রকাশ পাবে।
একই প্রত্যাশায় রয়েছেন এই মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনসহ অন্যান্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরাও। তাদের মতে, রায় যত দ্রুত প্রকাশিত হবে ততই পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করে একাত্তরে বুদ্ধিজীবীদের হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা সম্ভব হবে। যার মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হওয়ার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।ওই বছরের ১১ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি।
এর প্রায় দুই বছর পর এবছরের ১৬ জুন চূড়ান্ত রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।এটি ছিলো মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর মধ্যে ৬ নং অভিযোগ।
এ অভিযোগে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্ব) থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনার দায়ও প্রমাণিত হয় মুজাহিদের বিরুদ্ধে।
তবে ১ নম্বর অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেনকে হত্যার দায়ে থেকে আপিল মামলার রায়ে খালাস পান মুজাহিদ। ট্রাইব্যুনাল অবশ্য ওই অভিযোগেও তাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন।এ অভিযোগেও মুজাহিদের সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির দায় প্রমাণিত বলা হয়েছিলো ট্রাইব্যুনালের রায়ে।
অন্যদিকে ৭ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার দায়ে মুজাহিদকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু’টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল।আর আপিল বিভাগ ১ ও ৬ নম্বর অভিযোগকে আলাদা করেই চূড়ান্ত রায়টি দেন।
মুজাহিদের রায়টিসহ সর্বোচ্চ আদালত মোট পাঁচটি রায় ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড এরই মধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।এছাড়া সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায়ও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।সেটিও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।অন্যদিকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। আর ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকারকুল শিরোমনি গোলাম আযম ও অপর যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলীম কারাগারেই মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল আবেদনের ওপর শুনানি বাতিল করা হয়।
Discussion about this post