প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে’ এমন অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি কোথায় আছেন তা জানা নাই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) অ্যাটর্নি জেনারেল তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে গত চার-পাঁচদিন ধরে কোনও যোগাযোগ নেই বলেও জানান রাষ্ট্রের এই প্রধান আইন কর্মকর্তা।
উনি (প্রধান বিচারপতি) কোথায় আছেন জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি জানি না। আমার জানার কথা না। তাছাড়া অসুস্থ হলে যদি অনুমতি না দেন তাহলে তো জোর করে দেখতে যাওয়া যায় না।’
অনুমতি চেয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘আমি চেষ্টাই করি নাই। দেশে থাকলে হয়তো চেষ্টা করবো।’
প্রধান বিচারপতির হঠাৎ এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ছুটিতে গেছেন, আমাদের মাননীয় আইনমন্ত্রী বলেছেন, উনি কী কারণ দর্শিয়ে গেছেন। আমরা জানি উনি একজন ক্যান্সারের পেশেন্ট (রোগী)। আগেও উনার ক্যান্সারের ট্রিটমেন্ট হয়েছে। কাজেই এটা সম্পূর্ণ উনার ব্যক্তিগত ব্যপার।’ এ সমস্ত বক্তব্য দিয়ে একটি বিশেষ রাজনেতিক দল নানারকমফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এগুলোর কোনো সারবত্তা নেই,কোনও রকম বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। এগুলোকে গোচরে আনারই প্রয়োজন পড়ে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন,‘এই উপমহাদেশে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যখন অটাম ভ্যাকেশন (শরৎকালীন অবকাশ) অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের যে ছুটি সে ছুটির পরে আইনজীবীদের সঙ্গে বিশেষ করে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে বিচারপতিরা সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হতেন।
তিনি বলেন,‘এরই আলোকে অনেকদিন বন্ধের পর নতুন করে কোর্ট শুরু হয়েছে। আমরা আইনজীবীদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের এ মিলনমেলা, চলেছে ১টা পর্যন্ত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘সৌজন্য সাক্ষাতের আগেই আদালত বসেছিলেন। পাঁচজন বিচারপতি বসেছিলেন। কার্য তালিকার প্রায় ২০টির মতো মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, আগামীকাল থেকে সবগুলো কোর্ট নতুন কার্যতালিকা অনুযায়ী কাজ শুরু করবে। যেসব নতুন মামলা তালিকাভুক্ত হবে তার ভিত্তিতে আপিল বিভাগের কাজ পরিচালিত হবে। এছাড়া আপিল বিভাগে কয়টি বেঞ্চ বসবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
চাপ প্রয়োগ করে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে আইনজীবী সমিতির সভাপতির এমন বক্তব্যের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন,‘আইনজীবী সমিতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কুক্ষিগত হয়ে পড়ার কারণে এ ধরনের কথা বলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। একজন বা দুজন বিচারপতির জন্য এদেশে কোনোদিনই বিচার বিভাগের কাজ বন্ধ থাকেনি।
‘আইনজীবী সমিতিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আপনারা জানেন। এর আগে কাদের মোল্লার পরিবারকে নিয়ে বার অ্যাসোসিয়েশনে মিটিং করেছে। অনেকগুলো যুদ্ধাপরাধের মামলার ব্যপারে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা হীন প্রচেষ্টা।
অবকাশোত্তর সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে প্রধান বিচারপতির না থাকার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন,‘উনি (প্রধান বিচারপতি) থাকবেন কেন? উনিতো গতকালই ছুটিতে চলে গেছেন। ছুটিতে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল ( সোমবার) রাতেই প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে। তাহলে এক অনুষ্ঠানে কি দুইজন প্রধান বিচারপতি থাকতে পারেন? তাছাড়া এটা সম্পূর্ণ তার ব্যাপার।’
Discussion about this post