রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে বের হচ্ছেন এক যুবক। শুকনো মুখখানা। চোখ ছলোছল। সাদা শার্টে এখনও রক্তের ছাপ, গুলিতে নিহত ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজারের রক্তের। এ যুবকের নাম বিল্লাল, বললেন, ‘অনেক চেষ্টা কইরাও বেচারারে বাঁচাইতে পারলাম না’।
তাবেলা সিজারের হত্যাকাণ্ডের এমন বর্ণনায় বিল্লাল বলছিলেন, ‘প্রথমে মানুষটারে দেইখা ভয় লাগতাছিলো। পরে মনে হইলো চক্ষের সামনে একজন মানুষ মইরা যাইব! ভারী মানুষ, একা তুলতে পারি না। আশেপাশের সবাই ধরাধরি কইরা সিএনজিতে উঠায়া দিলো। মনে হইতাছিলো এখন কি আমারেও গুলি করব কিনা! তার মাথাটা আমার কাঁধে। রক্ত ছুয়ে ছুয়ে পড়ছে শার্টে। আল্লা আল্লা করতাছি যেন জানটা বাঁচে। হাসপাতালে আইনা সিএনজি থেকে নামাইতেই পইড়া গেলো। তখনও বাঁইচা আছে মানুষটা। ডাক্তার, নার্সরা আসল। ধরাধরি কইরা নিয়া গেলো ভেতরে। তারপরেই শুনি মানুষটা নাকি নাই।’
রাত প্রায় সাড়ে ১২টায় বিল্লালকে নিরাপত্তা দিয়ে পুলিশের গাড়িতে করে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
মধ্যরাত পর্যন্ত ইউনাইডেট হাসপাতালের হিমঘরেই রয়েছে তাবেলা সিজারের মরদেহ। তবে, স্বজনদের কাছে কবে নাগাদ এ মরদেহ হস্তান্তর করা হবে সে বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না।
এদিকে, তাবেলার মরদেহ রাখা ইউনাইটেড হাসপাতাল ও এর আশেপাশের এলাকা ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। মধ্যরাত পর্যন্তও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সন্ধ্যায় গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন তাবেলা সিজার (৫০)। তিনি ঢাকায় নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আসিসিও-বিডি এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের মে মাসে তাবেলা আইসিসিও-বিডিতে যোগ দেন। তিনি থাকতেন গুলশান-২ এর ৫৪/৫১ কর্নার প্লটের বি/৫ অ্যাপার্টমেন্টে।
Discussion about this post