সাকিনা বেগম কলকাতার বিখ্যাত শ্রমিক নেত্রী ও অবিভক্ত বঙ্গের প্রথম নারী আইনজীবী।
প্রারম্ভিক জীবন
সাকিনা বেগমের মূল নাম সাকিনা ফারুক সুলতানা মোয়াজ্জেদা। তার জন্ম সম্ভবত পারস্য দেশে। পিতা ছিলেন বিপ্লবী। ১৯০৫ সালে সেদেশে গনতান্ত্রিক বিপ্লব ব্যর্থ হলে মৃত্যুদন্ড এড়াতে কলকাতায় আশ্রয় নেন ও গোপনে ‘হাবুল -এ -মতিন’ নামে উর্দু সাপ্তাহিক প্রকাশ করে পারস্যদেশে পাঠাতেন। সাকিনার বড় হয়ে ওঠা কলকাতা শহরে। উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী মি: মজিদে’র (I.C.S) সাথে বিবাহ হয়। এক কন্যাসন্তান হয়। মনোমালিন্যের কারণে স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছেদ করেন সাকিনা ও পিতৃগৃহে আইন পড়া শুরু করেন। তিনিই ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নারী আইনজীবী। ইন্দো- পার্শিয়ান পরিবারে মেয়ে হয়েও তিনি মনেপ্রাণে বাঙালী হয়ে উঠেছিলেন। মুসলিম নারীদের শিক্ষার দাবীতে ‘সওগাত’ পত্রিকায় বাংলায় প্রবন্ধ লেখেন তিনি।
শ্রমিক আন্দোলন
১৯৪০ সালের মার্চ মাসে কলকাতা পৌরসংস্থার মুসলিম মহিলা সংরক্ষিত আসনে কমিউনিস্ট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হন ও জয়লাভ করেন। এসময় তিনি কলকাতার কয়েক হাজার ধাঙ্গড়, মেথর, জমাদারদের অবর্ণনীয় দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করেন, তাদের সংগঠিত করা শুরু করেন। পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন অস্বাভাবিক কম দিত। ১৯৪০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল, সাকিনা বেগমের নেতৃত্বে আঠোরো হাজার ধাঙড় শ্রমিক ধর্মঘটে শামিল হয়। কর্পোরেশনের অল্ডারম্যান সুভাষচন্দ্র বসু আলোচনার দায়িত্ব নিলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি কারণ তাদের বেতন, সামাজিক সম্মান ও জীবনযাত্রার মানের দিকে পৌর কতৃপক্ষ কোনো নজর দেননি। ৩রা এপ্রিল স্বামী সহজানন্দ সরস্বতীর চেষ্টায় তাদের দাবী মানা হলে এই ধর্মঘট উঠে যায়। এই ঘটনার পর থেকেই সাকিনা বেগম অত্যন্ত জনপ্রিয় শ্রমিক নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ধাঙ্গড় শ্রমিক ইউনিয়নের সভানেত্রী ছিলেন। অন্যান্য নেতারা হলেন বঙ্কিম মুখার্জী, শিবনাথ ব্যানার্জী, বীরেন রায় প্রমুখ। তার অভিজাত বংশমর্যাদা ও রক্ষনশীলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি হয়ে ওঠেন শ্রমিকদের ‘মাতাজী’। তার বাড়িতেই গড়ে ওঠে ধাঙড় শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস। ১৯৪২ এর ২৬ আগস্ট শ্রমিকরা আবার ধর্মঘট করে পৌর কর্মকর্তাদের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগে। ২৭ আগস্ট গ্রেপ্তার হন সাকিনা বেগম ও ১০০ জন শ্রমিক। আন্দোলন দমনে পুলিশ ধরপাকড় সহ লাঠি, গুলি চালায়। মুসলিম লীগ নেতা, মেয়র এ.আর সিদ্দিকি সাকিনা বেগমকে কলকাতা ত্যাগের নির্দেশ দেন এর ফলে শ্রমিক আন্দোলন কার্যত নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। কারণ অন্যান্য নেতাদের বেশিরভাগ অংশই ছিলেন জেলে বা আত্মগোপনে।
শেষ জীবন
সাকিনা বেগমকে অন্তরীন অবস্থায় থাকতে হয় কার্শিয়াং এ। তিনি আর কলকাতায় ফিরে আসেননি। ক্রমশ আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তার সম্পর্কে আর বিশেষ কিছু জানা যায়না। শোনা যায় তিনিশেষ বয়েসে ইরানে চলে গিয়েছিলেন।
-উইকিপিডিয়া
Discussion about this post