মিয়ানমারের রাখাইনে অবিলম্বে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক জোট আসিয়ান ও এশিয়ার অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ে এক ডিপ্লোম্যাটিক ব্রিফিংয়ে এ আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাষ্ট্রদূতদের ঘণ্টাব্যাপী ব্রিফ করেন তিনি।
ব্রিফিংয়ের পর পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। সচিব বলেন, ‘ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ করে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা সবচেয়ে জরুরি।” তিনি আরও বলেন, ‘কফি আনান কমিশনের রিপোর্টের দ্রুত পূর্ণাঙ্গ ও শর্তহীন বাস্তবায়ন চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’ সচিব বলেন, ‘কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ভেরিফিকেশন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আমরাও এটি চাই।’ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতরা এ সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে পুলিশ ও সেনা পোস্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে পরদিন থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোয় নৃশংস দমন-পীড়ন শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে অন্তত তিন লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নে আরও অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার চাপ সামলাতে বাংলাদেশের কি দরকার– তা রাষ্ট্রদূতদের জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এত খুঁটিনাটি বিষয়ে আমরা এখনও আলোচনা করিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে বুধবার বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। সেখানে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’
চলমান রোহিঙ্গা সংকটে ভারত ও চীনের অবস্থান জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘ভারত ও চীন আমাদের ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্র। এ কঠিন সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তারা আমাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশ দুটি বলেছে, এ কঠিন সময়ে তারা আমাদের পাশে থাকবে, আগেও যেমন ছিল।’
রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে একটি নিরাপদ অঞ্চল গঠনের প্রস্তাব বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখন এ নিয়ে আলোচনা চলছে।’ এ প্রস্তাবে মিয়ানমারের কোনও রেসপন্স আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার এ বিষয়ে কোনও রেসপন্স করেনি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই ব্রিফিংয়ে আসিয়ান সদস্য মিয়ানমারের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’ ব্রিফিংয়ে আফগানিস্তান, ব্রুনেই, চীন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post