বিডিলনিউজ: আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে বগুড়া শহরের শহীদ খোকন পার্কের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে হরতাল-সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক জগলুল পাশাসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় জগলুল পাশা গত ১৮ ডিসেম্বর বগুড়া সদর থানায় জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, সাধারণ সম্পাদক আরাফাতুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মেহেদী হাসানসহ ৪২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। আসামিরা ১৬ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। জামিনের মেয়াদ শেষে আসামিরা গতকাল বগুড়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
নেতা-কর্মীদের জামিন না দেওয়ায় বগুড়ায় আদালতের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। এ সময় আদালতের কাঠগড়া ভেঙে ছয় আসামি নেতা-কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এর ঘণ্টা দুয়েক পর ছয় নেতা-কর্মী আবার আদালতে হাজির হলে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও উপস্থিত আইনজীবীরা জানান, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হাকিম আবদুল হামিদের আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিচারক ৪২ জনের মধ্যে ৩৬ জনের জামিন মঞ্জুর করে বখতিয়ার, আরাফাতুর রহমান, মেহেদী হাসান, আদিল শাহরিয়ার, মহরম আলী ও শাহ আলমের জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ সময় আসামি এবং তাঁদের সঙ্গে আসা নেতা-কর্মীরা আদালতকক্ষের মধ্যে হইচই শুরু করেন। তাঁরা বিচারকের উদ্দেশে গালিগালাজ এবং এজলাস কক্ষে আসবাব ও আলমারিসহ চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর ও কাগজপত্র তছনছ করেন। এ সময় বিচারক দ্রুত খাসকামরায় চলে যান। একপর্যায়ে এজলাসের ভেতরে কাঠগড়া ভেঙে জামিন না পাওয়া ছয় নেতা-কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে নেন নেতা-কর্মীরা। পরে নেতা-কর্মীরা বাইরে এসে আদালত চত্বর ও রাস্তায় প্রায় ৪০টি যানবাহন ও আদালতের পাশের ১০টি দোকান ভাঙচুর করেন। আদালত চত্বরে পুলিশের অনেক সদস্য উপস্থিত থাকলেও তাঁরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। খবর পেয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। আদালত চত্বরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছিনিয়ে নেওয়া আসামিদের আদালতে হাজির হওয়ার অনুরোধ করেন। এ নিয়ে সমঝোতাও হয়।
একপর্যায়ে দুপুর একটা ৩৫ মিনিটে পুলিশের সামনে দিয়ে আদালতে হাজির হন সিপার আল বখতিয়ার, আরাফাতুর রহমান, শাহ মেহেদী হাসান ও আদিল শাহরিয়ার। কিছুক্ষণ পর আসেন মহরম আলী ও শাহ আলম।
আত্মসমর্পণ নয় গ্রেপ্তার! পুলিশ দাবি করেছে, ছিনিয়ে নেওয়া আসামিরা আত্মসমর্পণ করেননি, তাঁদের কৌশলে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই আনোয়ার হোসেন দাবি করেন, ছয় নেতাকে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Discussion about this post