বাস্তবতা নিয়ে চিন্তা করে না এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। আইনজীবী হওয়ার আগের এবং পরের চিন্তাগুলির মধ্যে বিস্তর পার্থক্য থাকা সত্তেও চিন্তা বা ভাবনা একাংশও কমেনি। তার আগে বলে নেই, এখনো একজন আইনজীবী হতে পেরেছি কিনা তা বলা কঠিন। কেননা পরিক্ষা দিয়ে পাস করে হাইকোর্ট প্রেকটিস করা আর একজন সত্যিকার অর্থে আইনজীবী হওয়ার মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। দিন যত যাচ্ছে ভয় ততটাই বাড়ছে। এই ভয় সম্মানের, এই ভয় দায়িত্ববোদের। অন্য সবার মত আমিও ভাবিনি এমন দিন পার করতে হবে অথচ ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এর আগেও পৃথিবীর মানুষ অনেক বার এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল।
DLR, MLR আর কেস রেফারেন্স খুজতে খুজতে যার দিন কাটে সে কিভাবে ভাববে এরকম পরিস্থিতির কথা। যে মানুষ কিনা আজকের ঘটনা পরের দিনই ভুলে যায়।আইন নিয়ে পড়াশোনা করব কিংবা আইনজীবী হব এই স্বপ্নটা আমার কখনোই ছিল না। যে স্বপ্ন আমি দেখিনি সেই জিনিসগুলি আমার জীবনে বারং বার ফিরে আসে। গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁও ঢাকার খুব কাছেই আমার বাড়ি। তারপরেও পরিবার সহ ঢাকাতে থাকি অনেক বছর ধরে। স্কুল কলেজের গন্ডিটা এই শহরেই। গত ২৬/৩/২০২০ সনে কোর্ট বন্ধ দেয়ার ঘোষণা কালে কেন জানি গ্রামের বাড়ি যেতে ইচ্ছা করল। চলে গেলাম পরিবার সহ সোনারগাঁও। অবাক করা বিষয় তারপর ও চিন্তা হয়নি থাকতে হবে বহুদিন। সে সময়টায় ভেবেছি ১৪ দিন সর্বোচ্চ।
প্রথম ২/৩ দিন টেলিভিশনের নিউজ/চ্যানেল দেখেই পার করে দিয়েছি অনায়াসে। ফেসবুক/মেসেঞ্জার গ্রুপ চ্যাটেই ব্যস্ত দিন পার করেছি অনেক দিন। একই রুটিন আর কত দিন ভাল লাগে। শবেবরাত তারপর রমজান চলে আসল। কোর্ট তখন সম্পুর্নরুপে বন্ধ। কয়েকজন ক্লাইন্ট ফোন দিয়েছে, খোজ খবর নিয়েছে কিন্তু মামলার কোন রকম প্যারা দেয়নি। আর কোর্ট বন্ধ থাকায় যাদের মাথার উপর তালগাছ নেই তারা শুরু করল লোন/ অর্থের অভাব এইসব নিয়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি। শুরু করে দিল ভার্চুয়াল যুদ্ধ। বিভিন্ন রকম সমস্যার উৎপত্তি। আর আমি মহা ব্যাস্ত বাবার টাকায় বিভিন্ন গ্রামে ত্রান সামগ্রী ভিতরনে। সমাজিক সচেতনা বৃদ্ধি করা ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য। কয়েকটা ছবি ও পোস্ট দিয়েছিলাম কিন্তু পরে ছবি দেয়া বন্ধ করে দেই বিতর্কতা এড়ানোর জন্য।
আমি কিশোর বয়স থেকেই শহরের পরিবেশে বড় হওয়ার কারনে গ্রামের মানুষের চিন্তা ভাবনা/ আচার ব্যাবহার সম্পর্কে অনেকটা অচেনা ছিল। এত দীর্ঘ সময় গ্রামে থাকিনি। রমজানের সময়টা ভালই কাটছিল। ভেবেছিলাম আল্লাহ এই সংকটময় দিনে রহমতের দরজা খুলে দিবেন। কিন্তু আর হল কোথায়!!! সরকারের দেয়া ত্রান চুরির ঘটনা এই রমজান মাসেই টেলিভিশন নিউজ স্ক্রিনে অহরহ ভেসে আসছিল। যাইহোক ভালই কাটছিল দিন গুলি। অন্তত মামলার প্যারা নেই শুধু মাঝে মাঝে চিন্তা হত কতদিন এভাবে দিন কাটাবো।
সামনে ঈদ, ইনকাম বিহিন কতদিন চলতে পারব। এদিকে কোর্ট খোলা নিয়ে ভার্চুয়াল যুদ্ধ চলছে। এক এক আইনজীবী এক এক মতামত। হটাৎ শুনি ঈদের আগে কোর্ট খোলে দিতে পারে। তবে সেটা ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে আদালতে অতিব জরুরী জামিন সংক্রান্ত শুনানি বিজ্ঞ আদালত শুনবেন। যেই না গুন গুন শুরু হল ঠিক তখন থেকেই আর শান্তি নেই ক্লাইন্টদের জ্বালায়।
শুরু হয়ে গেল একের পর এক ফোন কল। কাকে কি বলব নিজেই তো জানি না কি হবে। যাইহক কোর্ট খোলে দিল,কোর্ট খোলার নিউজ পাওয়ার সাথে সাথে এক ক্লাইন্ট ফোন দিয়ে বলল স্যার কোর্ট খোলার নিউজ পেলাম সত্যি কিনা আমি বল্লাম হ্যা সত্যি। তারপর বলল স্যার আমার বাবার জামিন টা হবে তো ঈদের আগে?? কি বলব আমি …….. কোন কিছু ভেবে না পেয়ে বলে দিলাম ইন শা আল্লাহ। ফোন রাখার পর ভাবছি কি করব? এদিকে পাবলিক টান্সপোর্ট বন্ধ। আমার ড্রাইভার ছুটিতে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। অন্তত চেম্বারে যেয়ে ফাইলগুলি তো আনতে হবে, যাব কিভাবে? আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না।
৩ টা চিন্তা মাথায় গুরপাক খাচ্ছিল। এক, বাসা থেকে বের হতে দিবে কিনা? দুই ,বাসা মেনেজ করলে ও যাব কিভাবে ? তিন, ড্রাইভার কে ফোন দিলে এই শর্ট সময়ে আসতে পারবে কিনা? এক দিকে মেজাজ চরম গরম হচ্ছিল কেন কোর্ট খুলে দিল আর অন্যদিকে মাথায় আসছিল কোর্ট বন্ধ থাকলে অনেক আইনজীবী ভাইরা অর্থ কষ্টে মরবে, অনেক ক্লাইন্টের মামলা অনিশ্চয়তায় থাকবে, অনেক আইনজীবীদের সহকারী আয় রোজগার না করতে পেরে, না খেয়ে মরবে। সব চিন্তা বাদ দিয়ে ফোন দিলাম ড্রাইবার কে সে যেন কালকেই চলে আসে। চেম্বারে যাব ধীর্ঘ দের মাস পর ভেবে ভাল লাগছে কিন্তু বাসায় কি বলব? বাবা মাকে কি বলব?? যাইহক উত্তর রেডি করে রাখছি।
সকালে গুম থেকে উঠে দেখি ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে হাজির। মাস্ক, হেন্ড স্যানিটাইজার, গ্লাপ্স সব চেক করছি ঠিকমত নিয়েছি কিনা, এমন সময় আব্বু জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাব। যেই বল্লাম কোর্ট তো খুলে দিছে, ফাইলগুলো নিতে চেম্বারে যেতে হবে। আব্বু এক কথায় বলে দিল যাওয়ার কোন দরকার নেই। অবস্থা এখন খুব খারাপ। আমি আব্বুকে শুধু এটুকু বল্লাম আব্বু একটা ছেলের বাবা অনেক দিন যাবত জেল হাজতে, লক ডাউনের কারনে এতদিন কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। অন্তত এই কাজটা আমার করতে হবে। আব্বু তারপরেও বল্লল যে দেখ এমনিতেই নারায়নগঞ্জ এর অবস্থা ভয়াবহ, বাসা থেকে বের হওয়া শুধু তোমার না সারা গ্রামের জন্য হুমকি। আমি বল্লাম আল্লাহ না করোক, তুমি যদি জেলে থাকতা তাহলে আমি যে পরিস্থিতিই হক ঘরে বসে থাকতে পারতাম না। আমাকে যেতেই হবে….এই কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম।
চেম্বার এর অবস্থা নাজেহাল। ক্লিনার আতিক কে ফোন দিলাম৷ সে তো আমাকে দেখে মহা খুশি। কারন এই লক ডাউনে আর কেউ তার খুজ খবর না নেক আমি তাকে যতটুকু করা দরকার করেছি। লক ডাউন দেয়ার কিছুদিন পর আতিক আমাকে ফোন দিয়ে কাদতে ছিল। আমি বল্লাম কাদতেছ কেন? সে কাদতে কাদতে বলতেছিল স্যার কেউ বেতন দিতেছে না। মাকে প্রতিমাসে টাকা পাঠাতে হয় কিন্তু এখনো এই মাসে টাকা পাঠাতে পারিনি। সব শুনে তার কান্না থামিয়ে দিয়ে বল্লাম বিকাশ নাম্বার দে।
চেম্বারে থেকে নামার সময় লিফট ম্যানের সাথে দেখা, তার চোখ টলমল জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারলাম তার মা করোনা আক্রান্ত, বেতন পায় নাই। কি করব সহ্য করতে পারলাম না । পকেটে যা ছিল কোন কিছু চিন্তা না করে দিয়ে দিলাম। ফাইল নিয়ে চলে আসলাম বাসায়। মামলা রেডি করলাম, কিন্তু প্রিন্ট করে সাইন দিয়ে স্কেন করতে হবে। সব দোকান বন্ধ। চেম্বার ছাড়া উপায় নাই। তার মধ্যে নতুন এক নিয়মে আদালতে মামলা ফাইল করতে হবে। অনেক সিনিয়র, বন্ধুদের ফোন দিলাম। সবার অবস্থা একই……
যাইহোক পরের দিন চলে গেলাম কোর্টে, ব্যাঞ্চ অফিসার লিটন ভাইয়ের এর সাথে কথা বল্লাম। আমার ফাইলের বিষয়ে বিস্তারিত বল্লাম এবং কনফার্ম করলাম মেইল আসছে।বাসায় ফিরে আসলাম, সন্ধ্যায় কজ লিষ্ট চ্যাক করে দেখি মামলা লিষ্টে আছে। সিনিয়র কে ফোন দিয়ে জানালাম যে পরের দিন শুনানী। আমার সিনিয়র সানজিদা খানম সাবেক ঢাকা -৪ এর সংসদ সদস্য ছিলেন বর্তমানে বাংলাদেশ আওমিলিগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। এ যুগে এমন সিনিয়র পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
নতুন এক অভিজ্ঞতা,মাইক্রোসফট টিম এর মাধ্যমে শুনানি করতে হবে। আগে কখনো মাইক্রোসফট টিম ইউস করা হয়নি। youtube এ সার্চ করে কিছুটা অভিজ্ঞতা নিলাম। পরের দিন রওনা দিলাম চেম্বারে যাওয়ার উদ্দেশ্য কিন্তু গাড়ি আটকিয়ে দিল সাইনবোর্ডে, লক ডাউন যেতে দিবে না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে রেকার বিল দিয়ে চ্যাম্বারে আসলাম। মেম এর মধ্যে চলে আসছে। মেইল চ্যাক করে দেখি লিংক আসেনি। কি করব ১১ টা বাজে!!! মেম বিওর ফোন নাম্বার আছে কিনা জানতে চাইলো, আমি বল্লাম আছে। মেম ফোন দিল পরে বিও লিংক পাঠিয়ে দিল। মাইক্রোসফট টিমে জয়েন করলাম, জয়েন করে দেখিএর্টোরনি জেনারেল মাহবুবে আলম স্যার, ডি এ জি বসির স্যার আরোও কয়েকজন সহকারী এর্টোরনি জেনারেল ভার্চুয়াল কোর্টে রাষ্ট্র পক্ষে শুনানী করছেন। ক্লাইন্ট বসে আছে পাসের রুমে। যাইহোক আমাদের শুনানি সফলতার সহিদ শেষ হল। অবশেষে ছেলাটাকে জানালাম তার বাবার জামিন হয়েছে। এই কথা শুনে ছেলেটার চোখ জলমল করছে খুশিতে। মনের মধ্যে এক অজানা আনন্দ কাজ করছে। ঈদের আগে আর কোন কাজ করা হয়নি।
এবার মাথায় ঈদের চিন্তা কি করব, নতুন কিছুই কিনা হয়নি কারো জন্য। আগেই ভেবে রেখেছিলাম কিছু কিনব না এই ঈদে বরং এই টাকা দিয়ে কিছু গরীব আত্নীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের জন্য চাল,ডাল সেমাই কিনে বিলি করব। এদিকে বারের স্টাফ দের ফোন, চেম্বারের সিকিউরিটি গার্ডদের ফোন স্যার ঈদের বোনাস দিবেন না? জমানো টাকা প্রায় শেষের দিকে, কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি ছোট মানুষ কি বা করতে পারি। ভাবলাম দুর্দিনে যদি সবাই মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তারা যাবে কোথায়। যা ছিল সব ভাগ করে বিকাশ নাম্বার নিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। ভেবেছিলাম বাবার সাথে আমি ও কিছু কন্টিবিউশন করে আত্নীয় স্বজনদের মাঝে বিলি করব। কিন্তু তা আর হলো কোথায়।অন্যসব ঈদের মত নতুন জামা কাপড় না পরেও খারাপ কাটেনি। কিন্তু ঈদের দুই দিন পর থেকেই আবার ক্লাইন্টদের যন্ত্রণা, বুঝানো প্রায় কঠিন হয়ে যাচ্ছিল যে জামিন শুনানি ছাড়া আর কিছুই আদালতে পেশ করা সম্ভব না।
চেম্বারে যাওয়া শুরু করলাম, পেন্ডিং মামলা গুলি ফাইল করতে এমন সময় ফেসবুকের স্ক্রলে একের পর এক আইনজীবীদের স্টেটাস প্রবীন আইনজীবী ও সাবেক এ্যাডিশনাল এ্যাটর্নী জেনারেল এড. আব্দুর রেজ্জাক খান স্যার, এড. ফৌজিয়া করিম, এড. রবিউল ইসলাম বুদু স্যার, ব্যারিস্টার মারিয়ম খন্দকার, এড. তিতাস হিল্লোল, এড. শরীফ আহমেদ সহ অনেক আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিংবা বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন। এই তো গত ২৭/০৩/২০২০ এড. সানাউল্লাহ স্যার মারা গেলেন তবে তিনি করুনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাননি। এড. সনচিতা সাহা ১১/০৫/২০২০, এড. কবির চৌধুরী স্যার ০২/০৬/২০২০, এড. কে এম গোলাম উদ্দিন ০৩/০৬/২০২০, এড. সাহারা খাতুন ১০/০৬/২০২০, এড. শেখ নাসির উদ্দিন আহমেদ স্যার ২৪/০৬/২০২০ এবং এড. আব্বু বক্কর সিদ্দিকী স্যার ২৮/০৬/২০২০ ইং তারিখে মারা যান। ফেসবুক ওপেন করলেই মৃত্যুর সংবাদ, আর ভাল লাগে না।
সোনারগাঁও থেকে যাওয়া আসা অনেক প্রব্লেম হচ্ছিল। মেম কে জানালাম, মেম যাত্রাবাড়ি থানার ওসি মাঝহার ভাই কে ফোন দিয়ে বলে দিলেন আমার গাড়িটা যাতে না ধরে পাশাপাশি আমাকে ফোন নাম্বার ও দিয়ে দিলেন। এর কিছুদিন পরই সরকার ঘোষণা দিলেন সীমিত আকারে পাবলিক টান্সপোর্ট চলবে। তারপর থেকে আর গাড়ি নিয়ে জামেলায় পড়তে হয়নি।কিন্তু নতুন সমস্যায় পরে গেলাম, মামলা ফাইল করছি কিন্তু লিষ্টে আসছে না। এক সপ্তাহ যাবত অপেক্ষা করলাম কোন মামলা লিষ্টে আসছে। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করলাম তাদের ও সেই একই সমস্যা। কোর্টে যাওয়া ছাড়া এখন উপায় দেখছি না। এদিকে সহকারী নাসির ভাই ঢাকায় আসেনি যে তাকে দিয়ে খবর নিব।
কি এক মহা জামেলা। অন্যান্য বিজ্ঞ আইনজীবী ভাইদের কাছ থেকে জানতে পারলাম তদবির বিহীন মামলা লিষ্টে আসবে না। ক্লাইন্টদের যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না। আমি চেম্বারে একা, জুনিয়রা গ্রামের বাড়িতে। কি করব উপায় না পেয়ে তদবির করা স্টার্ট করলাম। যেখানে যা করা দরকার সেটা করার চেষ্টা তা না হলে ক্লাইন্ট তো আর আমাদের কাছে মামলা রেখে দিবে না (অনেক কিছু পাবলিকলি বলা মুশকিল তাই আর কিছু বল্লাম না)।
এরপর শুরু হলো এক এক কোর্টে মামলা ফাইল করার নিয়ম এক এক রকম। সেই নিয়ম মেনেই ফাইল করা শুরু করলাম অনেকগুলি মামলা শুনানি করা হয়েছে। আল্লাহ রহমতে ব্যার্থ হয়নি শুধু বিলম্ব ছাড়া।একদিন ঢাকা জজ কোর্টে গিয়ে দেখি সবই আগের মত শুধু ভিন্নতা আইনজীবীরা এজলাসে বসে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে শুনানি করছে আর বিচারক তার খাশ কামরায় বসে মামলা শুনছে। হায়রে ভার্চুয়াল আদালত!!!!
এরই মধ্যে অনেক ক্লার্কদের, আইনজীবী ভাইদের সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গনে আনাগোনা করতে দেখা যাচ্ছে। পরিচিত অনেকের সাথেই দেখা হচ্ছে। তরুণ চত্ত্বরের কফির দোকানটা ও খোলা দেখা যাচ্ছে। যাইহোক অর্ডার সংশ্লিট কোর্ট হয়ে জেল হাজতে পাঠানো কতটা কষ্টের এই পরিস্থিতিতে না পরলে বুঝতেই পারতাম না। তবে বেশ কাজ দিয়েছিল মেম এর ফোন কলে। মানিয়ে নিয়েছি এই কয়েক দিনে। অফিস সহকারী নাসির ভাইয়ের আবর্ভাব ঘটলো অবশেষে। ফোন পেয়ে মনে একটু শান্তি লাগল অন্তত একজন পাওয়া গেছে কিছুটা কাজের চাপ কমবে।
তার কিছুদিন পর শুরু হয়েছে আদালত চত্বরে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে রেগুলার কোর্ট খোলার আন্দোলন। মনতাজ উদ্দিন মেহেদি স্যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর পাশাপাশি শুরু হয়েছে শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের আন্দোলন। তাদেরকে পরিক্ষা বিহীন সনদ দিয়ে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত করার দাবি তাও সেটা সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে। ৩ দিন যাবত অনশন করছে। অনেক আইনজীবী ভাইরা বুঝানোর চেষ্টা করছে আন্দোলন /সমাবেশ যা ইচ্ছা করো কিন্তু এখানে না, বার কাউন্সিলের সামনে কিন্তু কে শুনে কার কথা। পরে হঠাৎ একদিন দেখলাম সুপ্রিম কোর্ট বারের সেক্রেটারি রুহুল কুদ্দুস কাজল স্যার আল্টিমেটাম দিলেন যে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর না ছাড়লে কঠোর ব্যাবস্থা নিবেন। তারপরের দিন থেকে তাদের আর দেখা যায়নি।
মামলা মোকাদ্দমা, কোর্ট কাচারি খারাপ চলছে বলব না, হয়তো আগের মত না কিন্তু মানিয়েতো নিয়েছি। কিন্তু আমার জীবনে ঘটে গেল আরেক দুর্বিষহ ঘটনা। এই তো গত ০১/০৭/২০২০ সনের ঘটে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারনে আমরা কেউ আর ঢাকাতে ফিরিনি। শান্তিনগর বাসায় যাওয়া হয় সপ্তাহে একবার। হটাৎ জুলাই এর এক তারিখ বাসায় গেলাম। দরজা চাবি দিয়ে খুলে দেখি বাসায় চুরি হয়েছে। আকাশ ভেঙে পড়ল। এত সিকিউরিটি, সিসি ক্যামেরা তারপর এই ঘটনা কিভাবে ঘটল কোন কিছুই মাথায় আসছে। পুলিশ কল দিলাম, থানায় গেলাম, বাসায় জানালাম, সিকিউরিটি গার্ডদের আস্ক করলাম কিছুই বলতে পারছে না। এত কিছু বলা এখানে পসিবল না। পারিবারিক মতামতে মামলা করলাম। মামলা করে পরলাম আরেক ফেসাদে। হায়রে কভিট ১৯ কারো জীবন নিচ্ছে কাউকে আর্থিকভাবে জীবন গ্রাস করছে।একদিকে ক্লাইন্টদের যন্ত্রণা, মামলা লিষ্টে আসছে না, পারিবারিক বিরহ, স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেয়া, থানায় যাওয়া কোন দিক সামলাবো?? বাবা তো সোনারগাঁও তার ব্যাবসার কাজে ব্যাস্ত, এক ছেলে হওয়ার যন্ত্রণা অনেক,,,,,,,
গত ২০/২৫ দিন আমার এভাবেই কাটছে,,,তবে আমার সিনিয়র সানজিদা মেম পাশাপাশি কামরুল স্যার অনেকটা মেন্টাল সাপোর্ট ছাড়াও থানা পুলিশের সাপোর্ট আমি পেয়েছি। যার ফলে সত্যিকার অর্থে আমি ভেঙে পরিনি। এই ছোট জীবনে অনেক কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। কোভিট ১৯ জীবন কেরে নিতে পারে কিন্তু অন্যায় /অপরাধ থামাতে পারেনি। এই তো কোরবানি ঈদের ভেকেশন কোর্ট চলছে, আদালত গুলিতে মামলা শুনানি করার জন্য কি চলছে সকল আইনজীবী ভাইদের জানা।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছুদিন যাবত হলি ফ্যামিলী হাসপাতালের আইসিওতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লরছে আমার অন্তান্ত কাছের ভাই এড. এনামূল হক। অমাহিক চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আমার এই লেখার ঠিক শেষ সময়ে তানভির ফোন দিয়ে জানাল এনামুল ভাই আর নেই ……সত্যি আর ভাল লাগছে না………
মশিউর আলম
এডভোকেট
সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ
Discussion about this post