কাশ্মিরে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা চলছেই। এবার শ্রীনগরে সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-র একটি বহরে চালানো হয় হামলা। এতে এক জওয়ান নিহত এবং আরও আটজন আহত হয়েছেন বলে সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৪ অক্টোবর শ্রীনগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আইনশৃঙ্খলা সামলানোর দায়িত্ব সেরে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরছিলেন এসএসবি ও জম্মু-কাশ্মির পুলিশের কয়েক জন সদস্য। তাদের গাড়ি জাকুরা শিল্পতালুক এলাকায় পৌঁছালে জঙ্গিরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে। কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলার পর জঙ্গিরা সেখান থেকে চলে যায়।
জঙ্গি হামলায় আহত ৯ জওয়ানকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে এসএসবি জওয়ান ঘনশ্যাম মৃত্যুবরণ করেন।
হামলার ঘটনাস্থল থেকে ৩০০ গজ দূরেই ছিল সিআরপিএফ-এর জাকুরা ঘাঁটি। গোয়েন্দাদের ধারণা, জঙ্গিরা হয়তো সেখানেই হামলা করতে চেয়েছিল।
জঙ্গি সংগঠন আল-উমর মুজাহিদিন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ভারতীয় বিমান অপহরণের পর জয়েশ-ই-মোহাম্মদ নেতা মাসুদ আজহারের সঙ্গে ছাড়া পাওয়া মুস্তাক আহমেদ জারগার এই সংগঠনটির নেতা।
সম্প্রতি উরি সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর আবারও জয়েশ-ই-মোহাম্মদের সংশ্লিষ্টতার প্রসঙ্গ তুলে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। পারস্পরিক দোষারোপ এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক তৎপরতার এক পর্যায়ে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতের সেনারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর দাবি করে। ওই অভিযানে ৯ পাকিস্তানি সেনা ও ৩৫ থেকে ৪০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর পর দুই সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে পাকিস্তান দাবি করে আসছে এটি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ছিল না, সীমান্ত সংঘর্ষ বা আন্তঃসীমান্ত গোলাগুলির ঘটনা ছিল। এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে উভয় পক্ষ।
এই প্রেক্ষাপটে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ এখন যতোটা না জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাফল্য-ব্যর্থতার প্রশ্ন, তার থেকেও বেশি করে ভারত ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্ষমতা-আত্মমর্যাদা আর দম্ভের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা আগেই আশঙ্কা জানিয়েছিলেন, ভারত কথিত এই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পাকিস্তানের জঙ্গিদের আরও বেশি প্রতিশোধপরায়ণ করে তুলবে। সেই আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে গত কয়েকদিনে সেনাঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার শিকার হয় ভারত।
ওই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর আগে-পরে মিলিয়ে ২৭ দিনে অন্তত ছয়টি জঙ্গি হামলা চালানো হয় জম্মু-কাশ্মিরে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
Discussion about this post