আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা অর্থাৎ স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন ভারতের নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন, বিশিষ্ঠ লেখিকা অরুন্ধুতি রায়সহ অনেকে। এবার জম্মু-কাশ্মীর নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসের কান্নান নামের এক কর্মকর্তা।
তবে কান্নান প্রকাশ্যে জম্মু-কাশ্মীর নীতির প্রতিবাদে পদত্যাগ করার কথা স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, ভেবেছিলাম সিভিল সার্ভিসে থেকে মানুষের বক্তব্য তুলে ধরতে পারবো। দেখলাম আমার কণ্ঠই রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
দাদরা ও নগর হাভেলি প্রশাসনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলানো কান্নান আরো বলছেন, আমি স্বরাষ্ট্রসচিব বা অর্থসচিব নই। আমার পদত্যাগে পরিস্থিতির বদল হবে না। কিন্তু আমার বিবেক স্বচ্ছ।
আইএএস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ায় কান্নান ক্ষুব্ধ। তার এক সতীর্থের জানান, ও বলত মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়ার অর্থ জরুরি অবস্থা জারি হওয়া। তবে, এর আগেও মোদি সরকারের সঙ্গে বিরোধ হয়েছে কান্নানের। লোকসভা ভোটের সময়ে এক নেতা তাকে অনৈতিক নির্দেশ দেয়ায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছিলেন কান্নান।
কান্নানকে ‘দেশ-বিরোধী’ তকমা দিয়ে একপক্ষ টুইটারে প্রচার শুরু করে চলেছে। তবে এসবে কান দিচ্ছেন না তিনি। বলছেন, দেশের স্বার্থে আমি দেশ-বিরোধী তকমা সহ্য করতে রাজি।
এদিকে, ঘটনার পর কান্নানের পাশেও দাঁড়িয়েছেন অনেকে। প্রাক্তন আইএএস অনিল স্বরূপের বক্তব্য, কান্নানের মতো অফিসারদের নিয়ে আমরা গর্বিত।
কাশ্মীরে ব্যারিকেড প্রত্যাহার, রয়েছে কাটাঁতারের বেড়া
ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মিরের বেশির ভাগ এলাকা থেকে রোববার ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়া হলেও রয়ে গেছে কাঁটাতারের বেড়া। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, অধিকাংশ এলাকাতেই রাস্তা থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে যাতায়াত করতে পারছেন মানুষ।
প্রশাসনের দাবি, শুক্রবারের নামাজ ও মিছিলের ডাক সত্ত্বেও শনিবার বিশেষ গোলমাল হয়নি। ফলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। শনিবার জাতিসংঘ সামরিক পর্যবেক্ষকদের অফিস পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামী নেতারা। এরপর শ্রীনগরে পুনরায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
এরই মধ্যে কাশ্মিরের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা। প্রায় ১৬ দিন কাশ্মীরে আটক ছিলেন তিনিও। ইলতিজার বক্তব্য, ‘‘এই পরিস্থিতিতে সত্য জানাটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে হচ্ছে আমাদের জীবন অনেকটা জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ উপন্যাসের মতো হয়ে গেছে।’’ ওই উপন্যাসে ব্যক্তির উপরে রাষ্ট্রের নজরদারির বাড়াবাড়ির কথা তুলে ধরেছিলেন অরওয়েল।
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাস্তাঘাটে গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। অফিসেও বেড়েছে হাজিরার সংখ্যা। তবে এ দিনও বন্ধ বাজার-দোকানপাট। বাটামালু ও লাল চকে কয়েক জন ব্যবসায়ী রাস্তায় দোকান খুলেছিলেন বলে দাবি কর্মকর্তাদের। অন্যদিকে এ দিন সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা আর্জিতে জম্মু-কাশ্মীরে নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। হতে চেয়ে আর্জি জানিয়েছে প্রেস কাউন্সিল। আর্জিতে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার কারণে সংবাদমাধ্যমের উপরে কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি হতেই পারে।
Discussion about this post