নয়জন যোগ্য লোক দুটো চেয়ারের মধ্যে একটি চেয়ারে বসার ক্ষমতা রাখে । বিভিন্ন যোগ্য নির্ণায়ক পদ্ধতিতে এক হাজার জন থেকে বাছাই করে তারপর এই নয়জনকে বাহির করা হয়েছে ।আরেকটি চেয়ার ফাঁকা । এটা নির্দিষ্ট কিছু মানুষের জন্য । এই নির্দিষ্ট মানুষগুলোও যোগ্য তবে ওই নয়জনের মত নয় । কিন্তু শুধু মাত্র নির্দিষ্ট থাকার কারণে এই সিটের জন্য প্রতিদ্বন্দী দুজন এবং অপেক্ষাকৃত অনেক কম মেধা সম্পন্ন যোগ্য মানুষ ।
এখন দেখা গেল যে চেয়ারের জন্য নয়জন প্রতিযোগী সে চেয়ারটিতে বসার জন্য নয়জনের মধ্যে দুইজনের চেয়ারটা খুব প্রয়োজন । কিন্তু একজনইতো পাবে সেই প্রতিক্ষিত চেয়ারে বসার সুযোগ । দুজন দাবীদার হলেও সেখানে মেধার পরীক্ষা, অন্যান্য যোগ্যতা মিলেে একজনকেই দেওয়া হল সেই চেয়ারের দায়িত্ব । কিন্তু যার বেশী দরকার সে ছিটকে পড়লো প্রতিযোগীতা থেকে । অপরদিকে আরেকটি চেয়ারে মোটামুটি প্রতিযোগীতা ছাড়াই অর্জন করে নিল একটি চেয়ারের মালিকানা ।
কোটা পদ্ধতি থাকুক তাতে সমস্যা নেই কিন্তু মেধার আবাদ করতে দোষ কি ? অনেক নিয়োগ আলাদাভাবেই কোটা ধারীদের জন্য রেখে দেওয়া হয় । একদিকে ত্রিশ বছর, অন্যদিকে শিক্ষা জীবন শেষ করতেই লেগে যায় সাতাস বছর আরেকদিকে কোটা এবং আরেকটা ধাপ দুর্নীতি !
এই সবগুলো দিক বিবেচনা করে সরকারি চাকুরীর নাম দেওয়া হল সোনার হরিণ । যখন সোনার হরিণ নাম দেওয়াই হল তখন তা ধরার জন্য যেকোন উপায় অবলম্বন করাও মানুষ হালাল ভেবেই নিল । লাখ লাখ টাকা দিয়ে সোনার হরিণ ক্রয় করে এবার টাকার চাষ হোক এই হরিণ দিয়েই ।
তবে সাধারণ মেধাবীরা কোথায় যাবে ? হ্যা তাদেরও একটি যাওয়ার জায়গা আছে । সেটা হল হতাশার আতুর ঘর ।
আমার খুব পরিচিত একজন । অনেকগুলো সরকারি পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত গিয়েছে সে কিন্তু চাকুরী হয়নি । ভাইবা পর্যন্ত যারা যায় তারাতো মেধাবীই বলা যায় । সেক্ষেত্র তাকে কি বলা যাবে ভাগ্য বিরম্বিত নাকি মেধাহীন ?
সমাজ বা চাকুরী দাতারা যাই বলুক এই মেধাবী সন্তান এখন দিন যাপনের জন্য সামান্য বেসরকারি একটি চাকুরী করে এবং বলে তার কোন জীবনের স্বাদ নেই কারণ তার বড় ইচ্ছে জীবনে পূর্ণ হয়নি । এই যে পূরণ না হওয়া থেকে তার জীবনের প্রতি অনীহা চলে আসা এই বিষয়টিকে যেভাবেই দেখা হোক এটা নিত্যান্তই হতাশাকর ।
কোটা পদ্ধতি আর দুর্নীতি দূর করা গেলে দেশের জন্যই ভালো । নিযোগে শুধুমাত্র কোটা ভিত্তিক নিয়োগের সার্কুলার কেন ? যেখানে কোটার কাউকে পাওয়া যাচ্ছেনা সেখানে সাধারণ থেকে নিয়ে পূরণ করলে সমস্যা কোথায় ? প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার খুব বেশী সময় হয়েছে । এর সাথেই বড় আরেকটি প্রশ্ন ত্রিশ বছর কেন চাকুরীর বয়স নির্ধারিত থাকবে ?
চাকুরীতে প্রবেশের কোন বয়সই দরকার নেই । যারা ইচ্ছে যেকোন সময় যেকোন চাকুরীর পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে এবং এক্ষেত্রে আরেকটি ভালো সম্ভাবনা তৈরী হবে তা হল অভিজ্ঞ মানুষ সরকার সরাসরি নিতে পারবে খুব দ্রুত ।
কোটা পদ্ধতি মেধা নির্ণয়ে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে । মেধাকে পেছনে ফেলে শুধুমাত্র আলাদা কোন যোগ্যতার কারণে এভাবে নিয়োগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের হতাশায় ফেলার মতই । কিন্তু কোটাও থাকতে হবে । সেটা পরিসর কমিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে । যারা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন তাঁদের সে অবদানকে ভোলার নয় । তাঁদের সন্তানেরা চাকুরী পাবে তবে একজন মুক্তিযোদ্ধার সকল বংশ পরম্পরাই নীতির মধ্যে থাকবে বা নীতির জন্য কাজ করবে তা তো নাও হতে পারে । এই জায়গার বিবেচনাবোধ এবং সঠিক বাছাইকরণ প্রক্রিয়া আরও বাড়াতে হবে । কোন আলাদা করে কোটার পরীক্ষা না নেওয়াও ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করি । চাকুরী ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে চিন্তার চেয়েও প্রয়োজন বয়স বাড়িয়ে দেওয়া কারণ এর ফলে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের কাজে যোগদান নিশ্চিত হবে ।
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post