মোঃ আল-ইমরান খান:
অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, দেখা যায় যে, আসামী জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ও জেল গেট থেকে তাকে পুনরায় আটক করা হয়। এর দুটি দিক থাকতে পারে-১) যদি আসামী আদালতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন অর্জন করে কিন্তু আসামী প্রকৃত পক্ষে ভয়ংকর ও পেশাগতভাবে খুনি বা দাগী আসামী সে ক্ষেত্রে সমাজের বৃহত্তর নিরাপত্তার স্বার্থে জেল গেট থেকে আসামীর পুনরায় আটক অনুমোদিত হতে পারে। ২)কিন্তু যদি আসামীর বিরুদ্ধে সু-স্পষ্ট এরুপ কোন অভিযোগ না থাকে তাহলে তার এরুপ আটক কি অনুমোদিত? রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যেখানে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবার মন খুলে কথা বলার এবং সদ্বিশ্বাসে সরকার সহ অন্য যেকোন ব্যাক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে গঠন মূলক সমালোচনার অধীকার স্বীকৃত সেখানে জামিন পাওয়ার পর যথাযথ কারণ ছাড়া আসামীর এরুপ পুনরায় আটক কোন ক্রমেই অনুমোদিত নয়।
আমাদের ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারার অধীনে যখন কোন ব্যক্তি আমল যোগ্য অপরাধে জড়িত থাকে বা তার বিরুদ্ধে যদি যুক্তি সঙ্গত কোন অভিযোগ আনয়ন করা হয় বা সে ঐরুপ অপরাধে জড়িত থাকতে বলে যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যুক্তি সঙ্গত কোন বিশেষ সন্দেহের কোন কারণ থাকে তাহলে তাকে ম্যাজিষ্ট্রেটের বিনা অনুমতিতে গ্রেফতার করা যেতে পারে। জেল গেট থেকে জামিনের পরও হয়ত তাকে অন্য মামলায় অথবা ৫৪ ধারার অধীনে সন্দেহের গ্রাউন্ডে পুনরায় আটক করা হয় যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিত, আইনের শাসনের নীতি বিরুদ্ধ এবং Right to life সহ freedom of movement এর ইচ্ছাকৃত স্খলন (Flagrant violation)।
আমাদের সুপ্রিম কোর্টের অনেক মামলায় সিদ্ধান্ত আছে যে, ৫৪ ধারার অধীনে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। প্রত্যেকটি সন্দেহের পেছনে কোন একটি সু-স্পষ্ট ঘটনা থাকতে হবে (There must be at least one definite fact behind every suspicion)। তাছাড়া, কোন ক্ষেত্রে জেল গেট থেকে আসামীর পুনঃ আটক মেনে নেওয়া যায় কোন ক্ষেত্রে যায় না এটা সংশ্লিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে অনুধাবণ করা খুব বেশি কঠিন কাজ বলে মনে করি না।
যখন কোন ব্যক্তি আদালতের আদেশে জামিনে মুক্তি প্রাপ্ত হয় তখন খামখেয়ালি পূর্ণ ভাবে জেল গেট থেকে আসামীর পুনঃ আটক আদালতের আদশের অবজ্ঞার নামান্তরই বটে। সুতরাং এক্ষেত্রে আদালতকেই আগিয়ে আসতে হবে ঐ ব্যক্তির মুক্তির ব্যাপারে। আদালতকে এরুপ ব্যাস্থাও করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে আদালতের পরোয়ানা ভঙ্গ করার সাহস কেউ না করে সে ব্যাবস্থা গ্রহণ করার।
আমার মতে পুনঃআটক কৃত ব্যক্তি এখানে দুই ভাবে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। প্রথমত, আসামির জামিনের দরখাস্তের সাথে সাথে আটক কারী অফিসারের বিরুদ্ধে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে অপরাধ মূলক আটকের ফৌজদারী আভিযোগ আনয়ন করা যেত পারে ; দ্বিতীয়ত, হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে এরুপ আটককে চ্যালেঞ্জ পূর্বক আদালত যাতে এরুপ ঘটনা না ঘটে এ লক্ষ্যে নির্দেশনার জন্য আবেদন করা যেতে পারে। আর আদালতের এ লক্ষ্যে উচিৎ হবে সঠিক বিচারিক মনের প্রয়োগ করে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্তের ব্যাবস্থা পূর্বক শক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ। মনে রাখতে হবে, আদালতের সিদ্ধান্ত আমান্য করনের ফলাফল খুব মধুর নয়। পাকিস্তানের উদাহরণে বলা যায়,আদালতের নির্দেশ আমান্যের জন্য সেদেশের প্রাধাণমন্ত্রী গিলানির প্রধাণ মন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছিল। এমনকি আমাদের দেশেও একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হলেও সাবেক পুলিশ প্রধাণ শহিদুল হককে তার পদ থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। শুধুমাত্র হাল ধরার মত শক্ত লোকের দরকার আমাদের এখানে। (সংক্ষেপিত)
Discussion about this post