অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়। ফর্সা হালকা গড়নের বুদ্ধি দীপ্ত চেহারার একটা মানুষ। ওকালতির পাশাপাশি লেখালেখির অভ্যাস ছিল। আইন বিষয়ে লিখতেন। যুগান্তর সহ বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা বের হলে আমাকে মনে করিয়ে দিতেন লেখাটা পড়তে। আমি নিয়মিত তাঁর লেখা পড়তাম ও সামনাসামনি সমালোচনা করতাম। পরিচয়ের পরেই যেনে ছিলাম পলাশ রায়ের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারিতে।মাঝে মধ্যে আদালত অঙ্গনে দেখা পেতাম না। জেনেছিলাম আটোয়ারীতে পলাশ রায়ের বাবা মা দুজনেই স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক প্রয়োজনে মধ্যে মাঝে গ্রামে যেতেন। ওর মা নির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন।
পরে পলাশ কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির আইন উপদেষ্টা পদে যোগ দেন। কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির সাথে যুক্ত হওয়াই ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। এর পর পলাশ রায় আর ভালো থাকতে পারেনি। কোহিনুর কোম্পানির সাথে পলাশের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওকে নিয়ে পত্রিকায় অনেক ঋণাত্মক খবর বের হয়। কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির সাথে বিরোধের জের ধরে হঠাৎ করে একদিন পলাশ নিখোঁজ হন। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পলাশকে উদ্ধার করে। তখন খবর বের হয় যে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির ৩২ লাখ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পলাশের মা মিয়া রানীর সহায়তায় পলাশ নিজেই এ গুমের নাটক করেছিলেন। বিষয়টি এখনো রহস্যাবৃত। ওর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল এবং ঢাকা কোর্টে সে মামলা বিচারাধীন ছিল।
বিগত উপজেলা নির্বাচনে পলাশ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। সম্প্রতি পলাশ পঞ্চগড়ে তাঁর বিরুদ্ধে অারেকটি মামলা হয় এবং সেই সূত্রে তিনি পঞ্চগড়ের কারাগারে আটক ছিলেন। জেনেছি যে ২৮ এপ্রিল ২০১৯ তারিখ একটি মামলা ধার্য তারিখ ছিল। ওই তারিখে পঞ্চগড়ের জেলা কারাগার থেকে ঢাকা আদালতে হাজির করার কথা ছিল। এর মধ্যেই সে আগুনে পুড়ে মৃত্যু বরণ করলো। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন। পলাশের মা মিয়া রানী বলছেন পলাশকে হত্যা করা হয়েছে।
জেলখানায় আগুনে পুড়ে মৃত্যু বা আত্মহত্যা রহস্যজনক। এই বিষয়ে মামলা ও তদন্ত হতে হবে। আইনী প্রক্রিয়ায় এর রহস্য উন্মোচন করতে হবে। যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সহকর্মী হিসেবে আইনজীবীদেরকেই এবিষয়ে সোচ্চার হতে হবে।
লেখাটি অ্যাড. কাজী হেলাল উদ্দীন এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত
Discussion about this post