আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতে বিচারকের খারাপ আচরণ ও অশালীন মন্তব্য করার প্রতিবাদে ঠাকুরগাঁওয়ে আইনজীবীরা আদালত বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। গত আড়াই মাস ধরে আইনজীবীরা জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালত বর্জন করে আসছেন। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা, বাড়ছে মামলাজট।
আজ বুধবারও আইনজীবীরা আদালত বর্জন অব্যাহত রাখেন। সব আদালতে আইনজীবীরা উপস্থিত হলেও জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালতে ছিলেন না আইনজীবীরা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা। পাশাপাশি মামলার জট আরও বাড়ছে।
সম্প্রতি ফয়জুল ইসলাম নামে এক বিচারপ্রার্থী আদালত বর্জন প্রত্যাহারের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেছেন জেলা ও দায়রা জজ, জেলা আইনজীবী সমিতি ও ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব বরাবরে।
ফয়জুল ইসলাম নামে ওই বিচারপ্রার্থী জানান, জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালতে আমার মত অনেকের বিচারাধীন মামলা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে এই আদালত বর্জন করে রেখেছে আইনজীবীরা। কিন্তু অনেক আইনজীবী আদালত বর্জন করলেও মক্কেলের কাছ থেকে নিয়মিত হাজিরার টাকা নিচ্ছেন। এতে করে আমার মত অনেক বিচারপ্রার্থী আর্থিক, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই দ্রুত জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালত বর্জন প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
জেলার রাণীংশকৈল উপজেলার বিচারপ্রার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালতে দুই মাস আগে তার একটি জমির মামলার রায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের ঝামেলা হওয়ায় কোনো আইনজীবী ওই আদালতে যাচ্ছেন না। এতে তার মামলার রায় আটকে রয়েছে। বেশ কয়েকদিন এসে তিনি ফিরে গেছেন।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন অভিযোগ করে বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতে বিচারকের খারাপ আচরণ ও অশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদে জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা। পূর্বের আইনজীবী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়াযী ওই আদালত বর্জন অব্যাহত রয়েছে। নতুন কমিটি আদালত বর্জন প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলা দায়রা জজের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন। সিদ্ধান্ত হলেই প্রত্যাহার করা হবে বলে এই আইনজীবী জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট তোজাম্মেল হক মঞ্জু জানান, আইনজীবীদের সঙ্গে আদালতে বিচারকের খারাপ মন্তব্যের প্রতিবাদে কমিটির সিদ্ধান্ত মতে আদালত বর্জন করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ওই আদালতের বিচারক আইনজীবীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিষয়টির সমাধান না করায় আদালত বর্জন অব্যাহত রয়েছে। নতুন কমিটি সিদ্ধান্ত নিলেই বর্জন প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে যুগ্ম জজ-১ আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ জেলা যুগ্ম জজ-১ আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবির আইনজীবীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও তাদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। একই দিন জেলা আইনজীবী সমিতি জরুরি বৈঠক ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই বিচারকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
-বিডি প্রতিদিন
Discussion about this post