শুক্রবার রাতেও সরকারের নির্বাহী আদেশ এলো না ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। শেষতক যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হলো না। তবে যে কোনো সময় সরকারের নির্বাহী আদেশ পৌঁছতে পারে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে। সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারও।
মূলত দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে গোটা দিন দেশের মানুষের দৃষ্টি ছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যেও আগ্রহ ও উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শুধু আগ্রহই নয়, একইসঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও ছিল সাধারণ মানুষের মনে।
বিশেষ করে সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফাঁসি কার্যকরের ব্যাপারে আইজি প্রিজন ও স্বরাষ্ট্র সচিবের বৈঠকের পর ফাঁসি কার্যকরের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে। চারদিকে চাউর হয় শুক্রবার যে কোনো সময় ঝুলিয়ে দেয়া হতে পারে ঘাতক সাকা-মুজাহিদকে।
এদিকে ফাঁসির প্রস্তুতির খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কাগারের ফটকের সামনে ভীড় করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। কারা কর্তৃপক্ষও ফটক ও ফটকের চারদিকে বাড়তি নিরাপত্তা গ্রহণ করে। মোতায়েন করে অতিরিক্ত কারারক্ষী ও পুলিশ। বন্ধ করে দেয়া হয় চারদিকের রাস্তাঘাট। কারা ফটকের প্রতিমুহূর্তে আপডেট প্রচারিত হচ্ছিল গণমাধ্যমগুলোতে। কারাসূত্র থেকেও পাওয়া যাচ্ছিল তাদের প্রস্তুতির সর্বশেষ খবর।
দুপরের আগে আগে সাকা-মুজাহিদের কাছে কারা কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির কাছে তারা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না জানতে চায়। ওই সময় দুজনেই তাদের সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখে।
এর মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত, ফাঁসি কার্যকরের মহড়া, ফাঁসির সরঞ্জাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কারা অভ্যন্তরে জল্লাদের অবস্থান ইত্যাদি খবর জানা গেছে নানা সূত্রে।
দুপুরে যখন সাকার আইনজীবীরা সাক্ষাতের জন্য কারাফটকে আসে তখন থেকে ফাঁসির সম্ভাবনা আবারো প্রবল হতে থাকে। যদিও সাকার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আইনজীবীদের করা আবেদন ফিরিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ এবং বিফল মনোরথে ফিরে যায় তারা। আবার সন্ধ্যার দিকে সাকার দুই পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী যখন সাকা চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কারা ফটকে আসেন তখন আরেক দফা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেবারও বিফল মনোরথে সাকার দুইপুত্র ও দুই আইনজীবীকে ফিরে যেতে হয়েছে।
এসময়ই জানা যায়, কারাগারের একই মঞ্চে ফাঁসি দেয়া হবে সাকা ও মুজাহিদকে। দেশের খ্যাতনামা জল্লাদদের আনা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। এসব খবর গণমাধ্যমে আসার সঙ্গে সঙ্গে কারা ফটকের সামনে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে এবং সর্বশেষ খবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন গণমাধ্যম কর্মীরাও।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড কার্যকরে সরকারের নির্বাহী আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেনি। তখন থেকেই কেন্দ্রীয় কারগারকে ঘিরে উত্তেজনা অনেকটা শিথিল হয়ে আসে। ভীড় কমতে থাকে কারা ফটকের।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কারাগার এখনো অপেক্ষা করছে ফাঁসি কার্যকরে নির্বাহী আদেশের। আর বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষায় আছে দুই যুদ্ধাপরাধীর এক মঞ্চে ফাঁসির খবর শোনার।
Discussion about this post