গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলার পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) দ্রুত প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
মঙ্গলবার এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরে বিষয়টি হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দশ জঙ্গির ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) নথি গত ২৭ আগস্ট রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়।
হাইকোর্ট সূত্র জানায়, ডেথ রেফারেন্সের নথিতে হত্যাচেষ্টা মামলার রায়, কেস ডকেটসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংযুক্ত রয়েছে। এখন মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হবে। এরপর পেপারবুক প্রস্তুত হলে তা শুনানির জন্য বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।
ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে এই নথি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়। পরে সেখান থেকে নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রেরণ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ বলেন, গত ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মমতাজ বেগম গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। একই মামলায় একজনের যাবজ্জীবন ও তিনজনের ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়। ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া তিনজনকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় খালাস পেয়েছেন ১০ জন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান খান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে মুফতি রউফ ওরফে আবদুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর। এই আসামিদের গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদ। ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড পেয়েছেন আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ও সরওয়ার হোসেন মিয়া।
২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী একটি বোমা পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের ওই বোমা উদ্ধার করে। পরদিন ২৩ জুলাই ৪০ কেজি ওজনের আরেকটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওইদিনই কোটালীপাড়া থানার পুলিশ হত্যাচেষ্টা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী ওই শক্তিশারী বোমার বিস্ফোরণ হলে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ হত। এতে হতাহত হত শতশত মানুষ। এ ঘটনায় জড়িত আসামি মুফতি হান্নানসহ চারজন ঘটনার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনাকারীদেরও একজন ছিলেন মুফতি হান্নান।
২০১০ সালে গোপালগঞ্জ আদালত থেকে মামলা দুটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলা ও তিনজনকে হত্যার মামলায় মুফতি হান্নানের ফাঁসি ইতোমধ্যে কার্যকর হওয়ায় এ মামলা থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে।
Discussion about this post