ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
প্রধান বিচারপতির ছুটির বিষয়ে আইনজীবীদের মধ্যে ভেদাভেদ লক্ষ্য করা গেছে- এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, রাষ্ট্রে তিনটি স্তম্ভের মধ্যে বিচার বিভাগ একটি। আর এর প্রধান হচ্ছেন, প্রধান বিচারপতি। তার ব্যাপারে আমাদের দল মতের ভেদাভেদ থাকার কথা ছিল না। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। এখানেও আমরা ভেদাভেদ লক্ষ্য করেছি। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিষয়টি এমনভাবে দেখাতে চেষ্টা করেছেন, যেন এটাই স্বাভাবিক ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে আমরা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করছি। ষোড়শ সংশোধনী রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সমস্ত অঙ্গ ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু বিচারবিভাগ নাক উঁচু করে একটু ডুবে থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বিচারপতিদের স্বাধীনতা, সম্মান ও মর্যাদায় শেষ পেরেকটি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ইস্যুতে দল মত ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। প্রতিটি আইনজীবীদের একমত ও একত্রিত হওয়া উচিত ছিল। আমাদের কাছে সুযোগ এসেছিল। কিন্তু আমরা পারলাম না।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, প্রধান বিচারপতির ছুটি যাওয়ার বিষয়টি দু:খজনক ও নজীরবিহীন। কারণ এর আগে ৩৯ দিনের আমরা একটি লম্বা ছুটি কাটিয়েছি। ছুটির পর পরেই আমরা বারের সদস্যরা চা চক্রে মিলিত হই। এসময় আমাদের মধ্যে কৌশলাদি বিনিময় হয়। আর সেটা মেনেই আমাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল এবং প্রধান বিচারপতিই এই দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা শুনতে পাই, উনি ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছেন। আর ছুটির দরখাস্তে ৫ টি বানান ভুল ছিল এবং স্বাক্ষরও উনা’র সাধারণ স্বাক্ষরের সাথে মিলছে না। আর এই ঘটনাগুলোই জনমনে নানান প্রশ্ন জন্ম দিয়েছে, আসলে বিষয়টি কি?
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, আমরা দেখেছি, যখনই প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনীর রায় দিয়েছেন, তারপরেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন সেটা আদালত অবমাননার মধ্যে পড়ে। সুতরাং এখানে এক ধরণের চাপের আভাস পাই আমরা। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করেছেন। অথচ যে বারের উনি অভিভাবক, সেই বারের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবীদেরকে দেখা করতে দেওয়া হলো না। বলছেন, দেখা করার অনুমতি নেই। তাহলে মাঝ পথে কেনো বাধা? আমরা গেটে গিয়ে সেই বিষয়টি শুনতাম। অর্থ্যাৎ পরো বিষয়ে লুকোচুরি ও এক ধরনের আড়াল করার বিষয় আছে। ষোড়শ সংশোধনী রায় যখন তাদের মতো হয়নি এবং রায়ে যখনই দেশের পরিস্থিতি ফুঁটে উঠেছে তখনই এই ঘটনাগুলো আমরা দেখছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, প্রধান বিচারপতির ছুটির পুরো বিষয়টি মধ্যে আমি চাপ লক্ষ্য করছি। বিষয়টি সাদা চোখে দেখার উপায় নেই। বাংলাদেশের গণমাধ্যম, ভারতের গণমাধ্যম এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের বক্তব্যে দেখলে বুঝা যায়, বিষয়টিতে চাপ রয়েছে। তবে সাদা চোখে দেখার জন্য বিষয়টি স্পষ্ট করতে বারের আইনজীবীরা দেখা করার চেষ্টা করেছেন। দেখা হলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হতো।
কূটনৈতিকদের সাথে বিএনপির বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে রুমিন ফারহানা বলেন, বৈঠকে আমিও উপস্থিত ছিলাম। মূলত, প্রধান বিচারপতির ছুটি, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি ধামাপাচা দেওয়ার চেষ্টা এবং ছুটির দরখাস্তে বানান ভুল ও স্বাক্ষরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
(আমাদেরসময়.কম)
Discussion about this post