প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতা সূলভ আচরণ চলে আসছে। প্রশাসন কখনোই চায় না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে চলুক অথচ বিচার বিভাগ প্রশাসনেরও নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমলাতন্ত্র সবসময় বিচার বিভাগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।’
আজ মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রশাসন কোনো দিনই চায়নি, এখনও চায় না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক। প্রশাসনের যারা উচ্চপর্যায়ে আছেন, তাদের পরিচালনা করেন কিছু আমলা, কিছু লোক পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সত্য জিনিসটি তাদের কর্মক্ষেত্রে উপস্থাপন করা হয় না। যার প্রেক্ষিতে তারা মনে করে বিচার বিভাগ তাদের প্রতিপক্ষ। এটি তাদের ভুল ধারণা।
তিনি বলেন, বিচার বিভাগ কারও প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কাজ করে না। বিচার বিভাগ সবসময় একটি ভারসাম্য রক্ষা করে চলে। তাদের যত কিছুতে ত্রুটি থাকে তা নিয়ে বিচার বিভাগের কাছেই আসতে হয়। আমরা তাদের বিচার করি। তারা নিরাপত্তা পায় না, প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা পায় না, নিশ্চয়তা পায় না চাকরি সংক্রান্ত, প্রমোশন সংক্রান্ত, তখনই এই বিচার বিভাগ তাদের নিশ্চয়তা দেয়।
পুরাতন মামলা নিষ্পত্তি করার উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকের অভাবে মামলার জট সৃষ্টি হয়। এজন্য নতুন বিচারক নিয়োগসহ নিম্ন আদালতের বিচারকদেরকে ভারতের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। এখন যত দুর্যোগ আসুক তা বাইরের সাহায্য ছাড়াই মোকাবেলা করা হচ্ছে।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মোছাব্বিরের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক জমশেদ মিয়া ও নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফুর রহমানের পরিচালনায় এতে বক্তৃতা করেন, জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহ, অ্যাডভোকেট চৌধুরী আব্দুল হাই, অ্যাডভোকেট সৈয়দ আফরোজ বখত, নূরুল আমিন, অফিল উদ্দিন, সিরাজুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রশাসনের আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন। সব সময় তিনি থাকবেন না। তিনিও একদিন অবসরে যাবেন। তখন সাধারণ নাগরিক হিসেবে থাকবেন। তাদের আত্মীয় স্বজন, পরিবার পরিজন তারাও এদেশে থাকছেন। তাদের তো সমস্যা হতে পারে। যদি বিচার বিভাগকে শক্তিশালি করা হয়, তবে তাদের সাময়িক ক্ষমতার পরে যে অনিশ্চয়তার মাঝে পড়বেন তখন কিন্তু বিচার বিভাগই তাদের নিশ্চতা দেবে। এটি তারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন ভুলে যান। যার প্রেক্ষিতে তারা মনে করেন বিচার বিভাগ আমাদের সবগুলো নিয়ে ফেললো, খেয়ে ফেললো। এটি তাদের ভুল ধারণা।
আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা যারা আইনজীবী তারা এটি তুলে ধরবেন। জনমত গঠন করবেন। তাহলে এ ভুল বোঝাবুঝি দূর হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অনেক দেশ আছে যারা অনেক ধনী। যাদের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি টাকা আছে। কিন্তু তাদের উন্নত জাতি হিসেবে ধরা হয় না। শুধু টাকা থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের জন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে প্রধান বিচারপতি আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে নবনির্মিত জুডিশিয়াল ভবন পরিদর্শন করেন তিনি।
Discussion about this post