নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল এবং তার স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানো পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানকে বদলির আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে এই আদেশ কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না- তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপ-সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
বুধবার সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত খবর সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী আদালতের নজরে আনলে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করেন।
বিষয়টি আদালতের নজরে আনা আইনজীবীদের মধ্যে এম আবদুল কাইয়ুম পরে সাংবাদিকদের জানান, আদালত আগামী বুধবার পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছেন। এর আগে সকালে বিষয়টি হাইকোর্টের পৃথক দুটি বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী শিশির মনির ও ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তার মধ্যে আইনজীবী শিশির মনিরকে বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নজরে আনার পরামর্শ দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের মামলায় একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান। এর পর বিকালে তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনজুরুল ইসলাম মোর্শেদ এ বিষয়ে নিশ্চিত করে জানান, ওই দিন বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আইন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে বদলি করা হয়। এ সংক্রান্ত একটি আদেশ অফিস ফ্যাক্সের মাধ্যমে আমরা পাই।
ওই আদেশে জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা জেলা জজ হিসেবে বদলিসহ একই সঙ্গে পিরোজপুরের যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাছরিনকে ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
নাহিদ নাছরিন এ দায়িত্ব পাওয়ার পর আউয়ালের পক্ষের আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন পুনরায় আউয়াল দম্পতির জামিন পুনঃবিবেচনার জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই দিন আউয়াল দম্পতি জামিন পান।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম খান পান্না বলেন, সাবেক এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে দুদক যে মামলা করেছে তাতে আমরা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পাইনি। তিনি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ও আর্থিক লাভবান হয়ে আউয়াল ও তার স্ত্রীর জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ পেয়ে আসামিরা মেডিকেল ওয়ার্ডে যাওয়ার আবেদন করেন।
তিনি বলেন, এ ঘটনার কিছু সময় পর আইন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাকে (বিচারক) অন্যত্র বদলি করা হয়। আর এর পরে আবার জামিনের আবেদন করলে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাছরিন তা মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, দুদকের দায়ের হওয়া মামলায় এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীন উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিন নিতে ওই দিন দুপুর ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানের আদালতে হাজির হন। এ সময় আদালত এক আদেশে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
জানা গেছে, এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে সাবেক এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ৩টি মামলা দায়ের করেন। এর একটিতে সাবেক এমপি আউয়ালের সঙ্গে তার স্ত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়। ওই সব মামলায় তিনি ও তার স্ত্রী গত ৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জন্য জামিন লাভ করেন। আর ওই জামিনের শেষ কার্যদিবস ছিল মঙ্গলবার।
Discussion about this post