২২ বছর পরেও নিষ্পত্তি হয়নি ঢাকার আদালতে বিচারাধীন একটি হত্যা মামলার। আর এই মামলার এক আসামি ১৬ বছর ধরে বিনা বিচারে কারাগারে আটক রয়েছেন। ১৯৯৫ সালে মামলার চার্জশিট দিলেও বিচার নিষ্পত্তি করা যায়নি দীর্ঘ বছর ধরে। এই দীর্ঘ বছরে মাত্র দু’জন সাক্ষী দিয়েছেন এই মামলায়। বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে আসলে হাইকোর্ট মামলার নথি তলব করেছেন।
একইসঙ্গে আগামী ৮ নভেম্বর বিনা বিচারে আটক শিপনকে আদালতের সামনে হাজিরের জন্য জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের ডিভিশন বেঞ্চ রবিবার (৩০ অক্টোবর) স্বত:প্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন। এছাড়া শিপনকে কেন জামিন দেয়া হবে না এই মর্মে রুল জারি করেছে আদালত।
সূত্র জানায়, ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে মারামারিতে মাহতাব নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ খুনের ঘটনায় মো. জাবেদ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দুই নম্বর আসামি করা হয় মো. শিপনকে। এজাহারে তার পিতার নাম ছিল অজ্ঞাত। পরে ১৯৯৫ সালে দেয়া অভিযোগপত্রে বাবার নাম উল্লেখ করা হয় মো. রফিক। ঠিকানা উল্লেখ করা হয় ৫৯, গোয়ালঘটা লেন, সূত্রাপুর। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৭ নভেম্বর শিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে সে কাশিমপুর কারাগারে বন্দি রয়েছেন। চার্জশীট দাখিলের ৫ বছর পর ২০০১ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর এ পর্যন্ত সাক্ষী নেয়া হয়েছে দুজনের। মোট সাক্ষী রয়েছেন ১২ জন। আগামী ১১ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি টিভি ‘চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে’ অনুসন্ধানীমূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কুমার দেবলু দে। তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলায় বিচার না হওয়ায় এক আসামি বিনা বিচারে কারাগারে রয়েছেন ১৬ বছর। এ ধরনের ৫ শত আসামি বিনা বিচারে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। এভাবে বিনা বিচারে কারাগারে পড়ে থাকা অমানবিক। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শুনানিকালে চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ফুটেজ ও লিখিত স্ক্রিপ্ট জমা দেওয়া হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. শহীদুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট উপরোক্ত আদেশ দেয়।
পরে কুমার দেবলু দে গণমাধ্যমকে বলেন, এই আসামি ১৭ বছর ধরে কারাগারে বন্দি। বিচার শেষে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন তাহলে এই সময়টা কে ফিরিয়ে দেবে?
Discussion about this post