রাজধানীতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে কয়েকটি হিজড়া গ্রুপ। কয়েকটি এলাকায় নবজাতক ভূমিস্ট হলেই বাসায় মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় হিজড়ারা। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, মারামারিসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে তারা। এমনকি তাদের হাতে খুনের ঘটনাও ঘটছে। আবার তারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অনেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদকের কারবারও চালাচ্ছে। দিনের বেলায় চাঁদা ওঠানোর পাশাপাশি রাতে পতিতাবৃত্তির নামে ছিনতাইও করছে অনেকে। পাড়া-মহল্লায় আছে তাদের সোর্স।
হিজড়াদের টাকা তোলা নতুন কিছু নয়। আগে মানুষ যা দিত, তা নিয়েই খুশি থাকত হিজড়ারা। কিন্তু ইদানীং তাদের আচরণ বদলে গেছে। রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, দোকানপাট যেখানে-সেখানে টাকার জন্য মানুষকে নাজেহাল করছে তারা। হিজড়াদের কেউ কেউ অভিযোগ করছে, রাজধানীতে অনেক ‘নকল’ হিজড়া আছে, যাদের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিনা পরিশ্রমে অর্থ উপার্জন করা।
ট্রাফিক সংকেতে যানবাহন থামার পর হিজড়ারা সামনে এসে দাঁড়ালে যাত্রীদের কিছু করার থাকে না। তাদের সঙ্গে তর্ক করলে যাত্রীদের আরও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, হিজড়াদের একটি দল বিজয় সরণি মোড়ের চতুর্দিকে সিগন্যাল পড়লেই দৌড়ে এসে যানবাহনে থাকা যাত্রীদের কাছে টাকা দাবি করছে, না দিলে যাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল দিচ্ছে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানায়, ঢাকার বনশ্রী, খিলগাঁও, মতিঝিল, উত্তরা, মোহাম্মপুর, আদাবর, গুলশান, বনানী, মহাখালী, ফকিরাপুল, আরামবাগ, লালবাগ, শান্তিনগর, মধুবাগ, মিরপুর, মধ্যবাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, রামপুরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে হিজড়ারা চাঁদাবাজি করে আসছে। আবার তাদের মধ্যে আছে ভুয়া হিজড়াও। এদের নেপথ্যে নিয়ন্ত্রণকারীদের অধিকাংশ ভুয়া।
তবে হিজড়াদের দাবি, তারা সমাজে অবহেলিত। তাদের কেউ সুনজরে দেখছে না। তাদের বাঁচার জন্য দেশে নেই কোনো নীতিমালা। সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। যার ফলে তারা চাঁদাবাজি করা ছাড়া কোনো বিকল্প পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
হিজড়ারা বলছে, টাকা না তুলে তারা নিরুপায়। তাদের আয়-রোজগারের কোনো সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে। ইদানীং কিছু নকল হিজড়ার কথাও বলছে অনেকে, যারা মূলত পুরুষ কিন্তু হিজড়া সেজে টাকা আদায় করছে। এমনই একদল হিজড়া গতকাল একজন ‘আসল’ হিজড়াকে গুলি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হিজড়ারা বলে, গ্রামাঞ্চলে কিংবা জেলা শহরগুলোয় হিজড়াদের একঘরে হয়ে থাকতে হয়। সে কারণে তারা মহানগরগুলোয় চলে আসে। এদিক থেকে ঢাকা তাদের সবচেয়ে পছন্দ।
কয়েক দিন আগে হিজড়াদের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি বলেন, ‘অফিসের নারী সহকর্মীর সঙ্গে কাজে যাচ্ছিলাম। সায়েন্স ল্যাব পুলিশ বক্স মোড়ে রিকশার জট লাগতেই দুই হিজড়া দুপাশে এসে দাঁড়িয়ে টাকা চাইল। নারী সহকর্মীর শরীরে হাত দিতে শুরু করলে ২০ টাকা দেই। কিন্তু তারা আজেবাজে কথা বলতে শুরু করে।’
নগরবাসীর অভিযোগ হিজড়াদের টাকা আদায় এখন রীতিমতো উৎপাতে পরিণত হয়েছে। তাই হিজড়াদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালে একটি জরিপ করেছিল। ওই জরিপে হিজড়াদের সংখ্যা ১৫ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে হিজড়াদের দাবি, শুধু ঢাকা শহরেই কমপক্ষে ৩০ হাজার হিজড়া আছে। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার হিজড়াদের একটি পৃথক লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
Discussion about this post