বেসিক ব্যাংকের দুই হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬টি মামলার সবগুলোর চার্জশিট একসঙ্গে দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দদুক)। ২০১৫ সালের ২১ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়ের করা হয় এসব মামলা।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার অভিযোগ তদন্ত করছেন দুদকের উপ-পরিচালক ঋত্বিক সাহা, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, মির্জা জাহিদুল আলম, মাহবুবুল আলম ও শামসুল আলম, সহকারী পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন, উপ-সহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান মিরাজ ও আ স ম শাহ আলম।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর ১৫৬ জন আসামির মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ২৬ জন। বাকি ১৩০ জন আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে ৪৮টি, ডিএমডি ফজলুস সোবহানকে ৪৭টি, কনক কুমার পুরকায়স্থকে ২৩টি এবং ডিএমডি এ মোনায়েম খানকে ৩৫টি মামলায় আসামি করেছে দুদক।
মামলা দায়েরের পর থেকে একশ’র বেশি আসামিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখে দুদক। কেউ যেনো বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে বিভিন্ন বন্দরেও চিঠি পাঠায়।
গত বছরের ০৭ জানুয়ারি ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি ফজলুস সোবহান ও মোহাম্মদ সেলিম এবং ডিজিএম ও গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক শিপার আহমেদকে আটক করে দুদক। তাদেরকে মতিঝিল ও গুলশান থানার পৃথক দুই দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও তখনকার পর্ষদ সদস্যদের নাম দুদকের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করেছিলেন নোয়াখালী জেলার হারুনুর রশীদ। এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দুদক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ওই ঋণ জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। তিনটি প্রতিষ্ঠানই তাদের প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালত এখনও কোনো রায় দেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে বলেন, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান পর্ষদ সদস্যদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে কিংবা ম্যানেজ করে ত্রুটিপূর্ণ ঋণের অনুমোদন করান। আর অনুমোদন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঋণের টাকা দিয়ে দিতে ফোনে শাখা ম্যানেজারদের ওপর চাপ দেওয়া হতো। ঋণের অনুমোদন শাখা অফিসে যাওয়ার আগেই ব্যাংক থেকে টাকাও দিয়ে দেওয়া হতো। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) কোনো রিপোর্ট ছিল না। ঋণ প্রস্তাবে উল্লেখ করা জামানতের প্রকৃত মূল্য কতো টাকা হতে পারে, তারও মূল্যায়ন করা হয়নি। ঋণগ্রহীতার ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা আছে কি-না কিংবা ঋণের টাকা আদৌ তিনি ফেরত দিতে পারবেন কি-না, সেটিও যাচাই করা হয়নি।
তবে এক বছরের বেশি সময় পরেও মামলাগুলোর চার্জশিট দিতে পারেনি দুদক। অনুসন্ধানে থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, ‘তদন্ত চলছে। তবে ওপরের নির্দেশ ছাড়া কোনো কিছুই করা সম্ভব নয়’।
দুদকের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘৫৬টি মামলার তদন্ত চলছে, এটি অনেক বড় বিষয়। হাইকোর্ট দুদককে মামলার চার্জশিট স্থগিত করতে বলেননি। আদালতের আদেশ অনুসারে ৫৬ মামলার চার্জশিট দিতে কোনো বাধাও নেই। তবে রিটের রায় যখন দেওয়া হবে, তখন আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ৫৬ মামলার তদন্ত এখনো চলছে। এসব মামলার তদন্ত অবশ্যই দুদকের জন্য অনেক কিছু। এগুলো ছোট মামলা নয়। তাই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে দুদক। অতিরিক্ত সময় নেওয়া হচ্ছে এজন্য যে, ৫৬ মামলার কোনো আসামি যেন মামলা থেকে অব্যাহতি না পান, আবার নির্দোষ কোনো ব্যক্তিও যেন অন্তর্ভুক্ত না হন। সেদিকে বিশেষ নজর রেখেই মামলার তদন্ত করছে কমিশন। আর্থিক বিবেচনায়ও এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত’।
Discussion about this post