বিডি ল নিউজঃ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয়ে যায় ট্রফি জেতার পরদিনই। আর কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা বাংলাদেশেরটা কিনা হতে হতে পেরিয়ে গেল কত দিন! ভারতের বিপক্ষে ১৯ মার্চের ম্যাচের ২২ দিন পর গতকাল বিকেলে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে ছিল ক্রিকেটারদের সংবর্ধনার আয়োজন। কিন্তু এত দিন পর হলে যা হয়, তাই হলো। মানুষের বিশ্বকাপ ‘হ্যাংওভার’ কেটে যাওয়ায় সেটিতে ঠিক প্রত্যাশিত জনতার ঢল নামল না। ক্রিকেটভক্ত আর উৎসুক জনতা মিলিয়ে সংখ্যাটা মেরেকেটে হাজার পাঁচেকের বেশি নয়! গণসংবর্ধনা তাই পুরোপুরি ‘গণ’ হয়ে উঠতে পারল না। তবে এই আয়োজনের সূত্রে ওই এলাকার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় একটা গোলমাল ঠিক বাধিয়ে দেওয়া গেল। অনুষ্ঠানের দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণে দিনভরই তা বেধে থাকল। ৩০ মার্চ মেলবোর্নের ফেডারেশন স্কয়ারে অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে আয়োজনটা ছিল মাত্র ৩০ মিনিটের। অথচ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া বাংলাদেশের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়ে চলল রাত অবধি। সেজন্য বিশাল মানিক মিয়া এভিনিউয়ের এক পাশ বন্ধ করে দেওয়া হয় সকাল থেকেই। দুপুর থেকে ব্যান্ড দল নেমেসিসের পরিবেশনা দিয়ে যখন শুরু অনুষ্ঠানের, তখনো বাংলাদেশ দল এসে পৌঁছায়নি সংবর্ধনাস্থলে। যখন এসে পৌঁছেছে, ততক্ষণে আরেক ব্যান্ড দল ক্রিপটিক ফেইটের পরিবেশনা শেষে মাইলসের মঞ্চে ওঠার অপেক্ষা। তারা উঠলও এবং কয়েকটি গান পরিবেশনার পর শুরু হলো সংবর্ধনা পর্ব। একে একে মঞ্চে তুলে নেওয়া হলো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফের সদস্যদের। আইপিএল খেলতে ভারতে যাওয়া সাকিব আল হাসান থাকতে পারবেন না জানাই ছিল। বাবার অসুস্থতার কারণে কাল সংবর্ধনার মঞ্চে থাকতে পারলেন না আরেক অলরাউন্ডার সাব্বির রহমানও। সাকিব-সাব্বির ছাড়া উপস্থিত অন্য সবার গলায় একে একে ফুলের মালা পরিয়ে দিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকরা। সেই সঙ্গে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থার ফুলের শুভেচ্ছায়ও সিক্ত হয়েছেন ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রামের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বিসিবি সহসভাপতি আ জ ম নাসিরের সংশ্লিষ্টতা থাকায় আগের দিন বিকেলে সেখানকার এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। বাতিল হওয়া সেই অনুষ্ঠানের শিক্ষায় বিসিবি এদিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যাতে রাজনৈতিক রূপ না নিয়ে ফেলে, সেই চেষ্টায় ছিল তৎপর। যে কারণে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের পদ অলংকৃত করা দুই নেতা মঞ্চে উঠেছেন অন্য পরিচয়ে। একজন ছাত্রদের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। অন্যজন মঞ্চে উঠেছিলেন ঢাকা যুব সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে। অন্য পরিচয় দিয়েও যেমন তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করা যায়নি, তেমনি অনুষ্ঠানটিকে সর্বজনীন করার চেষ্টা করেও তা করা যায়নি। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদাররা উপস্থিত ছিলেন কিন্তু অনুপস্থিত পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে যিনি ‘ক্রিকেটের লোক’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। ১৯ মার্চের কোয়ার্টার ফাইনালের পর বাজে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রকাশ্যে সোচ্চার হয়ে ফাইনালের মঞ্চে উঠতে না পারা এবং এরই সূত্রে বিতর্কিত এন শ্রীনিবাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আইসিসি সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়া কামালকে কালকের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণই তো জানানো হয়নি! কেন? একটি ব্যাখ্যা এমন হতে পারে যে কামালের উপস্থিতি ক্রিকেট কূটনীতিতে অযাচিত ঝামেলা ডেকে আনতে পারে। তাই সাবধানতা হিসেবে কামালকে আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেরকম কিছু হলে তো বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের মুখে এমন কথা শোভা পাওয়ার কথা নয়, ‘আমরা কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছি। আমাদের আরো সামনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা ক্রিকেটের লোক। কথা বলব ক্রিকেটের ভাষায়। সামনে ভারত আসছে। আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াও। আমরা মাঠের খেলায়ই সব কিছুর জবাব দেব।’ সাবেক বিসিবি সভাপতি কামালকে ডাকা না হলেও সংবর্ধনায় ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন অনেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি হিসেবে সালমান এফ রহমান, বিওএ মহাসচিব শাহেদ রেজা এবং বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সাবেক অধিনায়কদের পক্ষ থেকে রকিবুল হাসানও ফুল তুলে দিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফির হাতে। নানা সময়ে একের পর এক ইনজুরিতে পড়া অধিনায়ক তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া এবং বিশ্বকাপ দলের নেতা হিসেবে তাঁকে বেছে নেওয়ার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা আমাদের খারাপ সময়েও ছিলেন। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি সব সময়ই এমন সমর্থন পাব। আমরা চেষ্টা করব ভালো খেলতে এবং আপনাদের ভালো সময় উপহার দিতে।’ বিশ্বকাপে উপহার দেওয়া ভালো সময়ের রেশ থাকতে থাকতেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটা হয়ে গেলে বোধ হয় মানুষের ঢলটা আরো বেশি নামত। কাল সন্ধ্যার ঠিক আগে রঙিন আতশবাজির ফোয়ারাও নিশ্চয়ই তাতে আরো বেশি রোশনাই ছড়াত!
তথ্যসূত্রঃ কালের কণ্ঠ
Discussion about this post