হতাশায় আমরা যখন চারিদিকে অন্ধকার দেখি, যখন দেখি আমরা শুধু পিছিয়ে পড়ার দলেই আর যখন ভাবি কোন কিছুতেই বুঝি আমরা সামনে আগাতে পারছিনা তখনই কিছু আশার আলো আমাদের হাতছানি দিয়ে যায় । তবে এবার যে আশার আলো আমরা দেখছি তা সত্যিই খুব বেশী উদ্দীপ্ত করছে আমাদের । কিছুদিন আগেও আমরা কল্পনা করতে পারতাম না দূষন ছাড়াও শিল্প নির্মাণ সম্ভব, ভাবতে পারতাম না একটি ফ্যাক্টরী সম্পূর্ণ কর্ম পরিবেশ হবে কর্মী উপযোগী ও নিরাপত্তা সম্পন্ন । কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশ এই খাতে অভাবনীয় ও ঈর্ষনীয় সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে । নিভৃতে নিভৃতে বাংলাদেশে গড়ে উঠছে সবচেয়ে আধুনিক ফ্যাক্টরী যে ফ্যাক্টরীগুলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে ।
বিশ্বে পোষাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সত্বেও ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে সবুজ শিল্পায়ন সমৃদ্ধে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে প্রথম ! বর্তমানে বাংলাদেশে 13টি পোষাক কারখানা রয়েছে যারা লিড প্লাটিনাম সার্টিফাইড ।
সাধারণত যেসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশের সুরক্ষা, মানবস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে নিজস্ব ভবনের নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এবং উল্লিখিত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ইউএসজিবিসি লিড সনদ প্রবর্তন করেছে। জিবিসিআই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যেটি বিশ্বব্যাপী লিড প্রকল্পগুলোকে যাচাই-বাছাইয়ের পর সনদ প্রদানের অধিকার রাখে ।
এই সার্টিফাইডধারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সেবগুলো ফ্যাক্টরীতেই পরিবেশ উপযোগী আধুনিক বিভিন্ন মেশিন ব্যবহার করা হয়, বিভিন্ন ধরণের শক্তির রিসাইকেল ও রিইউজ করা হয়, সিমীত পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবহার করা হয়, শ্রমিক নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়, ব্যবস্থা আছে অটোমেটিক ফায়ার প্রটেকশন, ডিটেকশনের এবং মানব সম্পদ বিভাগ থেকে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় করা হয় বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা ।
পরিবেশ দূষণ রক্ষায় আলাদা আলাদা মনিটরিং ও ভবিষ্যৎ প্লানের জন্য নেওয়া হয় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, ব্যবস্থা করা হচ্ছে সব শক্তি পু:ন ব্যবহারেরও । বার বার যে সবুজ শিল্পায়নের কথা বলা হচ্ছে তাতে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগুলো তারই স্বীকৃতি ।
বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের ৬৭টি কারখানা ইউএসজিবিসি থেকে লিড সনদ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩টি কারখানাই লিড প্লাটিনাম রেটেড। এছাড়া ২৮০টির বেশি কারখানা ইউএসজিবিসি থেকে সনদ পাওয়ার পথে রয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বে পরিবেশবান্ধব শিল্পোদ্যোগে প্রথম অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ।
লিড গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ১৩টি কারখানা হলো— রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড, তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড, কলাম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড, ইকোটেক্স লিমিটেড, এসকিউ সেলসিয়াস ইউনিট-২ লিমিটেড, কানিজ ফ্যাশনস লিমিটেড, জেনেসিস ওয়াশিং লিমিটেড, জেনেসিস ফ্যাশনস লিমিটেড, এসকিউ বিরিকিনা লিমিটেড, এসকিউ কোলব্লাংক লিমিটেড ও এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড।(সূত্রঃ দৈনিক বনিক বার্তা)
এর মধ্যে আরও অবাককর ব্যপার হল একটি গ্রুপের তিনটি ফ্যাক্টরীই এই গ্রীন সার্টিফাইড হয়েছে । এম এন্ড জে গ্রুপের কলাম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড, জেনেসিস ফ্যাশন লিমিটেড, জেনেসিস ওয়াসিং লিমিটেড এই তিনটি ফ্যাক্টরী একাধারে এই সার্টিফিকেট অর্জন করে । এ অর্জন শুধু একটি গ্রুপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় কারণ সারা দেশ থেকে যারা দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন তাদের সবার ।
পরিবেশ নিয়ে আরও ভাবতে হবে । আর এই ভাবনায় এই ফ্যাক্টরীগুলো হবে আমাদের দেশ ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের মধ্যে মডেল । এর জন্য শিল্প মন্ত্রনালয়েরও কিছু কাজ করতে হবে । এ্যাকর্ড এলায়েন্সের মত সংস্থার সাথে আমাদের পোষাক শিল্পের উন্নয়ন সম্পর্ক নিবিড় করার নিমিত্তে শিল্পগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে আরও বেশী সহায়তার হাত বাড়াতে হবে, প্রতিষ্ঠিত শিল্প উন্নয়নে সময় ও সুযোগ বাড়ানোর ব্যপারে বিভিন্ন সংস্থার সাথে সরকারের যোগাযোগ বাড়াতে হবে । প্রতিযোগীতার বিশ্বে সবুজ শিল্পায়ন উদ্যোক্তায় বাংলাদেশের প্রথম স্থান অর্জন অনেক বড় খ্যাতির ও আশাজাগানিয়া । আমরা চাই এই আশার জায়গাটি আরও বড় হোক এবং আরও দৃঢ় হোক ।
যদি পরিবেশ সম্মত শিল্প এভাবে গড়ে তোলা যায় তবে নদী বাঁচবে, বাঁচবে ভূগর্ভস্থ পানি, বাঁচবে বাতাসের দূষণ, রক্ষা পাবে পৃথিবীবর বাতাসের স্তর ও প্রকৃতি । আমরা যদি এভাবে আগাতে পারি তবে বাংলাদেশেই হবে শিল্পায়নে বড় মডেল এবং সে সময়টা খুব বেশী দূরে নয় । সকলের সহযোগীতা, ভালো সংবাদগুলো ছড়িয়ে দেওয়া ও কাঠামো বদ্ধভাবে কাজ করলে যে একটি ভালো ফলাফর আসে তা এই গ্রীন সার্টিফিকেট আবারও প্রমাণ করলো । পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে দেশের সকল তদারকি প্রতিষ্ঠানও এই সফলতার অংশীদার । আসুন সবুজ শিল্পায়নে আরও বেশী মনোযোগী হই এবং দেশকে বাঁচাই একত্রে ।
শিল্প ও নদী
বাঁচুক পাশাপাশি
বাঁচবে তবে বাতাস
ধরণী ও মানব কুল এক সাথে…
লেখকঃ সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post