ঢাকা: সংসদে বিচারপতিদের অভিশংসনের বিষয়ে আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মূল কাঠামোর অন্যতম অংশ। ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের এই মূল কাঠামোর পরিপন্থী। এ সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করছে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানিতে বুধবার (২২ আগস্ট) অ্যামিকাস কিউরির মত দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এ রিটের শুনানি চলছে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চে।
শুনানির সময় আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোতাহার হোসেন।
ড. কামাল বলেন, ১৬তম সংশোধনীর ফলে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যদের ভোটে একজন বিচারককে অপসারণ করা যাবে। ফলে এ পরিস্থিতিতে একজন বিচারক ভয়ভীতির উর্দ্ধে উঠে বিচার কাজ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, বিচারপতিদের অপসারণে সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে তা বহাল থাকে। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় উপেক্ষা করে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হলো। আমাদের দেশের ৪০-৪২ বছরের অভিজ্ঞতা আমলে নিলে এতো তড়িঘড়ি করে এ সংশোধনী আনা হতো না।
প্রবীণ এ আইনবিদ শুনানিতে আরো বলেন, বিচারক অপসারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ও দলীয় পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থাকায় বিভিন্ন দেশে এ সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পায়।
সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
হাইকোর্ট এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।
গত ২১ মে রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়। ওইদিন শীর্ষ ৫ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন আদালত।
১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে।
Discussion about this post