ডেস্ক রিপোর্ট
স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে ফায়ারম্যানের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়াসহ কয়েক দফায় জেল খাটেন স্বামী। অবশেষে আপোষের সম্মতিতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে স্ত্রীকে ৮ শতাংশ জমি লিখে দিয়ে চাকরি পুনর্বহালের আদেশ পেলেন স্বামী।
যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয় এবং তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট স্বামীকে খালাস দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘কম্প্রোমাইজ এপ্লিকেশন’ করেন।
শুনানির আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি হয় বলে জানান আইনজীবী। একপর্যায়ে স্ত্রী গতকাল আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে তাকে নির্যাতনের কথা বলেন। ওইদিন এবিষয়ে শুনানি মুলতবি হলে আজ আবার স্বামী-স্ত্রী দুজন আপিল বিভাগে নির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হন।
আদালত এসময় স্বামীকে বলেন, আপোষ মিমাংসার কথা বলছেন কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না, তার কি গ্যারান্টি আছে? জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে স্যার, এক হাতে তো আর তালি বাজে না।’
আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার স্বামী কিছু না করুক কিন্তু আমার সাথে ভালো আচরণ করুক। কিন্তু সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করতো। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ঐরকম আচরণ করবে না। তাই সন্তনটার চিন্তাটা করে এই (আপোষের) সিদ্ধান্তে পৌছেছি।
’ আদালত সেসময় ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘এই মামলা যদি খারিজ বা নিস্পত্তি হয়ে যায়, আর তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে তখন কি করবেন? এর জবাবে ওই স্ত্রী বলেন, সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। আমি আমার ছেলের বাবাকে ধরে থাকতে চাই বাঁচা অব্দি।’
এরপর আদালত ওই স্বামীকে বলেন, ‘আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিত এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চায় বা ওকালতি করতে চায় তা করতে দিবেন তো?’ জবাব সম্মতিসূচক হওয়াতে স্বামীকে এসময় আদালত বলেন, ‘ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই সংসারটা টিকুক। দুজনে দুজনের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। একজন আজ আদালতে বলছেন, এক হাতে তালি বাজে না। আমরা চাই আগামীতে যেন কোন হাতেই আর তালি না বাজে।’
ভবিষ্যতে আর স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না, বলে স্বামী অঙ্গীকার করলে সর্বোচ্চ আদালত তাকে বলেন, আপনি একটু জায়গা আপনার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে আসেন। ১ মাসের মধ্যে এটা দিয়ে আসলে আমরা আপনারা চাকরি ফিরিয়ে দিতে বলে দেব।’
গত ২২ সেপ্টেম্বর সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া এই আদেশ অনুযায়ী স্বামী ৮ শতাংশ জমি তার স্ত্রীকে লিখে দিয়েছেন বলে আজ আদালতকে জানান। এছাড়া চাকরি ফিরে পেলে সেই টাকা থেকে স্ত্রীকে ১৫ লাখ টাকা দেবেন বলে আপোষের শর্ত মেনে নেয়ার কথা বলেন।
তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির ভার্চুয়াল বেঞ্চ স্বামীর ফায়ারম্যানের বরখাস্ত হওয়া চাকরি পুনর্বহালের আদেশ দেন। সেই সাথে এসংক্রান্ত মামলা নিস্পত্তি করে দেন সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা চাই আপনারা দুজন একসাথে ভালোভাবে থাকেন। এতে সবচেয়ে লাভবান হবে আপনাদের ছেলেটা। কারণ, সে বাবা-মা দুজনকেই একসাথে পাবে।’
সবশেষে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ওই ব্যক্তির উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের চাকরি আপনার। বাইরের আগুন নেভানোর কাজ। এবার মনের আগুন নেভান।’
আদালতে স্বামীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। স্ত্রীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শিরিন আফরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
Discussion about this post