শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল্লাহ খালিদ হত্যার ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের ৪র্থ বর্ষের (৬ষ্ঠ ব্যাচ) ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা বিপ্লব চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ জানান, শুক্রবার (৫ আগস্ট) সকালে ঢাকার রামপুরাস্থ টিভি ভবনের সামনে থেকে বিপ্লব চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। গ্রেপ্তারের পর তাকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৯ এ নেয়া হয়। সেখানে এজলাসে বিজ্ঞ বিচারক ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরীর কাছে বিপ্লব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
শাহ কামাল আকন্দ আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ইলিয়াস গ্রুপ ঘটনার রাতে বঙ্গবন্ধু হল দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে গিয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে বিপ্লব পিস্তল বের করে গুলি চালান। এতে কাজী খালিদ সাইফুল্লাহ নিহত হন।’
জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত বিপ্লব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ ও সাধারণ সম্পাদক রেজা ই ইলাহি গ্রুপের নেতা।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শালবন বিহারের পাশে অবস্থিত বৌদ্ধ বিহারের পেছনে বিপ্লবের বাড়ি। বাবা বাবুল চন্দ্র দাস। বাড়ির কাছে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় তিনি ক্লাস-পরীক্ষা না দিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একই বছরে তিনি দুইবার অকৃতকার্য হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তার ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু গত কিছুদিন ধরেই তিনি আবার নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তাকে নিয়মিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও মার্কেটিং বিভাগ এক যোগে কাজ করেছে। মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিপ্লবের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে ও তৃতীয় বার পরীক্ষা নিতে একাডেমিক কাউন্সিলে আবেদন জানানো হয়, যা পুরোপুরি অবৈধ। সেই আবেদন যায় সিন্ডিকেটে। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে শুধুমাত্র তার জন্যই আয়োজন করা হয় তৃতীয় বারের পরীক্ষা। উক্ত পরীক্ষায় তিনি পাস না করলেও তাকে নম্বর বেশি দিয়ে পাস করিয়ে দেয়া হয়। এখনো তিনি ক্লাসে যাননি এবং হলেও ওঠেননি। শুধুমাত্র ছাত্রলীগ করার কারণেই তিনি এ সুবিধা পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘চার বছরের কোর্সের জন্য ছয় বছর আমরা গ্রহণ করি। ছয় শিক্ষাবর্ষ অ্যালাউ করা হয়। এর মধ্যে যে কেউ পুনরায় ভর্তি হতে পারে। তবে বিপ্লবের বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’
ছাত্রলীগ নেতা কাজী খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলেও নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করে আসছিলেন, ‘একাধিক ছাত্র দেখেছে যে আমার ছেলেকে বিপ্লব গুলি করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেনেও বিপ্লবের নামে মামলা করেনি।’
এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বলেন, ‘ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা কেউ সেখানে ছিল না। ঘটনা ঘটার পরে খবর পেয়ে তারপর সবাই সেখানে যায়। আমরা কিভাবে বলব কে হত্যা করেছে? এ জন্যই তো তদন্ত কমিটি ও মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্তকাজও শুরু হয়েছে।’
তিনি ঘটনার সময় উপস্থিত ছাত্রদেরকে তদন্তের সহযোগিতা করার আহ্বান করেন। এর আগে উক্ত মামলায় গ্রেপ্তার ৬ জনকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার আগস্টের প্রথম প্রহরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ ও ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। এতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মার্কেটিং ৭ম ব্যাচের ছাত্র সাইফুল্লাহ খালিদসহ তিনজন গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন অন্তত ১০ জন।
গুলিবিদ্ধ সাইফুল্লাহ ভোর ৪টার দিকে ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান। নিহত সাইফুল্লাহ কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তুজারভাঙ্গা গ্রামের হাইস্কুলমাস্টার জয়নাল আবেদিনের ছেলে।
এ ঘটনার পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
Discussion about this post