বিডি ল নিউজঃ
টানা অবরোধে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে দেশের সড়ক পরিবহন সেক্টর। গতকাল পর্যন্ত লাগাতার ১৫ দিনের অবরোধে সারা দেশে যানবাহন চলাচল করছে চরম ঝুঁকিতে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের অবরোধে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীতে দিনের বেলা যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও রাতের বেলা একেবারেই কমে যায়। এর বাইরে সারা দেশের চিত্র ভিন্ন। কিছু যাত্রীবাহী বাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহরায় চললেও তা ১০-১৫ শতাংশের বেশি নয়। সারা দেশে বাস ও ট্রাক মিলিয়ে দেড় লাখ যানবাহন রয়েছে। এসব যানবাহনে দৈনিক ক্ষতি ২০০ কোটি টাকা হিসাবে ১৫ দিনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বেকার হয়ে পড়ছে ৮ লাখ শ্রমিক। এ ছাড়া দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রলবোমা ও আগুনে মারা গেছেন একজন মালিকসহ ১৪ শ্রমিক। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। তবে পরিবহন মালিকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পরিবহন সেক্টর বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। অনেকে গাড়ি কেনার ব্যাংক ঋণ শোধ করতে পারবেন না। পরিবহন মালিক সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, অবরোধে পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় গাড়ি ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে শতাধিক যানবাহনে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দেওয়া তথ্যমতে, সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি গভীর রাতে বরিশালের উজিরপুরে পিয়াজভর্তি চলন্ত ট্রাকে পেট্রলবোমা মারা হয়। এতে চালকের আসনে বসে থাকা মালিক মানিক ও হেলপার মনির মারা যান। এক দিন আগে গাজীপুরে মিনিবাসে আগুন দেওয়ায় মারা যান খোরশেদ নামে এক পরিবহন শ্রমিক। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায় একজন করে, কুমিল্লা ও যশোরে দুজন করে ও রংপুরে চারজন নিহত হন। প্রথম দিকে সরকার সমর্থক পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের তত্ত্বাবধানে একটি অংশ এ সেক্টর সচল রাখার চেষ্টা করলেও পরবর্তীতে অনেকে পিছিয়ে যান। পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চালকরা যেমন গাড়ি চালাতে নারাজ, তেমনি মালিকরাও আগুনের হাত থেকে যানবাহন বাঁচাতে গাড়ি টার্মিনালে রেখে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে এনা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, একটি কোচ দিনে-রাতে দুই ট্রিপ দিয়ে থাকে। প্রতিটি গাড়িতে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার থাকেন। এ হিসাবে প্রতিটি গাড়িতে দুই শিফটে ছয়জন স্টাফ রয়েছেন। গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও স্টাফদের খোরাকি বাবদ দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। এর বাইরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও বাস টার্মিনালগুলোয় কাউন্টার ভাড়া বাবদ মাসে খরচ রয়েছে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিটি বাসের ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে হয়। হরতাল-অবরোধে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে আয় বন্ধ হয়ে গেলেও ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। হরতাল ও অবরোধকারীদের হাতে একটি কোচের সামনের গ্লাস ভেঙে গেলে ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় কিনতে হয়। আর জ্বালিয়ে দিলে গাড়ির বডি, সিট, চাকা, ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। ওই গাড়ি সচল করতে ৪ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। আর গাড়ির যথাযথ ক্ষতিপূরণ সরকার বা ইনস্যুরেন্স কোম্পানি থেকে পাওয়া যায় না বলে জানান পরিবহন মালিকরা। ভুক্তভোগী বাস ও ট্রাক মালিকদের তথ্যমতে, আয় বন্ধ হলেও ব্যয় অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে গুনতে হচ্ছে ব্যাংকের সুদ ও কিস্তির টাকা। মালিকদের মতে, প্রতিদিন গাড়ি বন্ধ থাকলে ২০০ কোটি টাকা লোকসান হয়। এসআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান জি আর শহিদ বলেন, গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৫০টি গাড়ি ছেড়ে যায়। একইসংখ্যক গাড়ি প্রবেশ করে। অবরোধের কারণে বাসগুলো দেশের বিভিন্ন টার্মিনালে আটকা পড়েছে।
Discussion about this post