সুনীল নারিন নিয়ে সমস্যা ঠিক তখনই শুরু হয়, যখন শুধু ব্যাটসম্যানরাই নয়, আম্পায়াররাও ওকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন গত বছর। নারিনের বোলিং অ্যাকশনের সমীকরণ বিজ্ঞানীর সোফায় শুইয়ে, ক্যামেরা ঘুরিয়ে, কম্পিউটারের স্ক্রিনে উলঙ্গ করে বার করা হয়েছিল। আধুনিক ক্রিকেটের এক বিস্ময়ের ভাগ্য ঠিক করতে মানুষকে শেষ পর্যন্ত মেশিনের শরণাপন্ন হতে হয়!
এই ভাবে নারিন সমালোচনার জঙ্গলে হারিয়ে গিয়ে বিশ্বকাপের পিচে পা ফেলতে পারেনি। যদিও এরই পাশাপাশি ও নিজের পা আর বোলিং হাত অন্য জায়গায় রাখতে পেরেছে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের মাধ্যমে নারিন ফের ওর জগতে অভ্যর্থিত হয়।
এর পর আইপএলের প্রথম দু’একটা সপ্তাহে কিছু ঘটেনি। নতুন চেহারার নারিন নিজের কাজ ওর স্বাভাবিক ভাবলেশহীন মুখে করে চলেছিল। যখনই বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যান ক্রিজে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছে, তৎক্ষণাৎ তার দিকে কেকেআর লেলিয়ে দিয়েছে নারিনকে। এবং হারের চেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে।
তবু নারিনের প্রত্যাবর্তন নারিনোচিত হয়নি। ও না কৃপণ বোলার থেকেছে, না ধ্বংসাত্মক হয়েছে। এ বারের আইপিএলে ওর তোলা মাত্র দু’টো উইকেটের মধ্যেও জেপি দুমিনির-টা কেবল দামি। নারিনের লোহার জালে এখন এতই ফাঁকফোকর হয়ে গিয়েছে যে, সব ধরনের শিকারই গলে পালিয়ে যাচ্ছে।
তা সত্ত্বেও অবশ্য কলকাতার কাছে তেমন কম্পন অনুভূত হয়নি। ওদের অন্য দুই বোলার মর্নি মর্কেল আর উমেশ যাদব মারাত্মক ফর্ম দেখানোয়। একজন এ দেশের যে কোনও পিচ থেকে বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিচ্ছে। অন্য জন বিপক্ষের অনিশ্চিত ব্যাটগুলোকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে মারাত্মক সুইংয়ে। আর একবার ওরা দু’জনে ঝাড়বাতিটা ভেঙে দিলে তার পরে টুকরোটাকরাগুলো তুলে মেঝে সাফা করে দিচ্ছে আন্দ্রে রাসেল আর পীযূষ চাওলা। কিন্তু নারিন ওর কাষ্ঠবৎ মানসিকতার ভেতরেও সম্ভবত কম্পন অনুভব করেছিল। ভেতরে ভেতরে হয়তো গরম হয়ে উঠেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে। ওর প্রথম ওভারে পাঁচ রান গেল। দ্বিতীয় ওভারে তার চেয়েও বেশি এবং বিপক্ষ চোখের নিমেষে একশো পেরিয়ে যায়…আর চিন্তার সেই ঘোলাটে মুহূর্তে নারিন ওর বেআইনি কুকিজ-এর জার-এ হাত ঢুকিয়ে দিয়ে থাকবে হয়তো! মাঠের আম্পায়াররা ওকে ধরলেও সমঝোতার রাস্তা খুলে রেখেছেন। তবে তাঁরা একটুও সময় নষ্ট না করে নারিনের ক্যাপ্টেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ব্যাপারেও কোনও ভুলচুক করেননি। কেকেআর এখন স্বেচ্ছা-সেন্সরশিপের রাস্তা নিচ্ছে। পত্রপাঠ নারিনকে চেন্নাইয়ের মেডিক্যাল ক্লাসে পাঠিয়ে দিয়ে। রবিবার ও অবশ্যম্ভাবী রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচটা মিস করবে। কলকাতা তার সবচেয়ে বিষাক্ত অস্ত্র ছাড়াই নামবে ইডেনে। ঘরের মাঠকে নিশ্ছিদ্র নাও দেখাতে পারে। নারিনের অনুপস্থিতি বিপক্ষকে স্বভাবতই অন্য সময়ের চেয়ে স্বস্তিতে রাখবে।
অবাক হবেন না, গৌতমের মুখের গম্ভীর ভাবটা রবিবার ইডেনের মাঝখানে যাওয়ার সময় যদি আরও গুরুগম্ভীর দেখেন!
সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা
Discussion about this post